লাশ ছুরি

বিডি নীয়ালা নিউজ(২রা  সেপ্টেম্বর ২০১৬ইং)-ডেস্ক রিপোর্টঃ কবর থেকে বিশেষ কায়দায় লাশ চুরি করতেন খাদেম পাখি মিয়া। আর তাজা লাশ তুলে রাসায়নিক ব্যবহার করে মাংস ঝরিয়ে কঙ্কালে পরিণত করতেন। এরপর ওই কঙ্কাল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতো ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীর কাছে। এভাবেই গত ৫ বছর  ধরে কঙ্কাল ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তারা তিনজন। ভয়ঙ্কর এই ব্যবসার তথ্য পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিল র‌্যাব। অবশেষে বুধবার কঙ্কাল চোর সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়ে র‌্যাব ওসমানী মেডিকেলের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হচ্ছে- মো. বেলাল হোসাইন (৪০) তার সহযোগী হীরা মিয়া (২১)। তারা দুজনই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের হিস্ট্রোলজি বিভাগের কর্মচারী। বুধবার রাতে র‌্যাব-৯ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল মাজারের দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন পূবালী ব্যাংকের সামনে থেকে একটি মানব কঙ্কালসহ বেলালকে আটক করা হয়। পরে তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হীরা মিয়াকে আটক করা হয়। র‌্যাব জানায়, আটককৃতরা প্রায় ৫ বছর ধরে অবৈধভাবে মানুষের কঙ্কাল বিক্রি করে আসছিল। সিলেটের কালাগুলস্থ হযরত বিয়াবন শাহ পীরের মাজারের প্রধান খাদেম পাখি মিয়া তাদের কঙ্কাল সরবরাহ করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে এই দুই ব্যবসায়ী। বেলাল র‌্যাবকে জানিয়েছেন, পাখি মিয়া কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে কঙ্কালে পরিণত করে এবং পরে চাহিদা অনুযায়ী তাদের সরবরাহ করতেন। এদিকে, বেলালের দেয়া তথ্যমতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের হিস্ট্রোলজি বিভাগ থেকে আরো দুটি মানব কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের কঙ্কাল সরবরাহকারীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। উদ্ধারকৃত কঙ্কালসহ আসামিদেরকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ জিয়াউল হক। এ ছাড়া মানুষের কঙ্কাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এই চক্রের মূল হোতাদের ধরতে জোরালো অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে র‌্যাব-৯ এর গণমাধ্যম সূত্র জানিয়েছে। এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে মাজারের খাদেম পাখি মিয়া। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, স্থানীয়দের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাদের দাফন করা হতো মাজারস্থ গোরস্তানে। আর মাজারের খাদেম লাশ দাফনের পরপরই কঙ্কাল সংগ্রহের পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ফেলেন। এবং ওই তাজা লাশের শরীরে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেন। ওই রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে শরীরের সব মাংস খসে পড়ে। এবং কঙ্কাল রয়ে যায়। পরে সেই কঙ্কাল প্লাস্টিকের ব্যাগে করে বিক্রি করা হতো বেলাল ও তার সহযোগীদের কাছে। এতে করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করতেন খাদেম পাকি মিয়া। আর তার অংশ পেতো বেলাল এবং তার সহযোগী। র‌্যাবের ধারণা, সিলেটে কঙ্কাল সিন্ডিকেটে আরো কয়েকজন রয়েছে। তাদের নেতৃত্বেও কেউ থাকতে পারে। সে বিষয়টি র‌্যাব তদন্ত করছে। এবং তদন্তে যার বিরুদ্ধেই দোষ পাওয়া যাবে তাকে আটক করা হবে। র‌্যাবের হাতে বুধবার গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল দুপুরে কঙ্কাল চুরির মামলায় পুলিশ আদালতে প্রেরণ করেছে। আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। সিলেটের সবচেয়ে বড় কবরস্থান হযরত মানিকপীর (রহ.) মাজার থেকে লাশ চুরি করে কঙ্কাল বিক্রির অভিযোগ করেছিলেন স্বজনরা। এসব ঘটনায় কয়েক বছর আগে গোরস্তানের কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। মাজারের বিদ্যুতের লাইটগুলো চুরি করে অন্ধকার স্থান থেকে লাশের কঙ্কাল চুরি করা হয় বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের।

এম/জ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে