ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে। আর মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গত ২১ অক্টোবর বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি না থাকলেও সাংঘাত থেমে নেই সিলেট ছাত্রলীগে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার উপশহরে খুন হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী হুসাইন আল জাহিদ।

পরিসংখ্যান বলছে, গেল ৮ বছরে সিলেট ছাত্রলীগের ১১ কর্মী খুন হয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, কেন্দ্র থেকে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিলেট ছাত্রলীগের দায়িত্ব প্রকৃত ও যোগ্য ছাত্রনেতাদের হাতে দেয়া হোক।

তথ্যানুসারে, ২০১০ সালের ১২ জুলাই এমসি কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ টিলাগড়ে খুন হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন তার বাবা বীরেশ্বর সিংহ। বিচার শেষ হয়নি এখনও।

২০১৪ সালের ১৪ জুলাই নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় টমটম (ইজিবাইক) স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আব্দুল্লাহ কচি নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী খুন হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাস। তিনি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন।

মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট ছুরিকাঘাতে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল আলী। মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন বিধান সাহা গ্রুপের কর্মী আলী। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি গ্রুপিংয়ে শিকার হয়ে প্রাণ হারান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান। গ্রুপ বদলের কারণে ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন মুহাম্মদ সাগর ও সোহেলের নেতৃত্বে হাবিবুর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাবিব। এ ঘটনায় তার ভাই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

গত বছরের ১৭ জুলাই সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে শ্রেণিকক্ষের ভেতর খুন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক পাভেল গ্রুপের কর্মী খালেদ আহমদ লিটু। তাকে গুলি করে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা ফয়জুর রহমান ছাত্রলীগের ফাহাদ আহমদসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নগরীর শিবগঞ্জে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম। তার ছোট ভাইকে জিম্মি করে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে খুন করা হয় ছাত্রলীগের সুরমা গ্রুপের কর্মী মাসুমকে। এ ঘটনায় তার মা আতিয়া বেগম এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা টিলাগড় গ্রুপের টিটু চৌধুরীসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

একই বছরের ১৬ অক্টোবর অভ্যন্তীণ বিরোধে টিলাগড়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ। তিনি এমসি কলেজের পাশাপাশি লিডিং ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলেন। এর মাসখানেকের কিছু বেশি সময় পরে, ২৫ নভেম্বর বিয়ানীবাজারে প্রতিপক্ষে হাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী আনোয়ার হোসেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জামাল হোসেন গ্রুপের কর্মী ছিলেন তিনি। পৌর শহরের মোকাম মসজিদের একটি পান দোকানের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে টিলাগড়ে খুন ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান। তিনি সিলেট সরকারি কলেজের বিএ পাস কোর্সের শিক্ষার্থী এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের অনুসারী ছিলেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে উপশহরে খুন হন সীমান্তিক স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুসাইন আল জাহিদ। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরে মারা যান। জাহিদ নগরীর তেররতন সৈদানীবাগ ১৯/৩৭নং বাসার কামাল মিয়ার ছেলে। জাহিদ খুনের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদের গ্রুপকে দায়ী করা হচ্ছে।

ছাত্রলীগের এসব ধারাবাহিক খুনোখুনির ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাবেক ছাত্রনেতারাও। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু (জগলু চৌধুরী) বলেন, ‘সকল মহল যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কঠোর ভূমিকা রাখেন, তবে এসব খুনোখুনি বন্ধ হবে।’

B/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে