sosal media_

বিডি নীয়ালা নিউজ( ১৫ জুলাই ২০১৬ইং)- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী আজকাল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই জনপ্রিয় এবং আলোচিত বিষয়। বিশেষজ্ঞদের ধারনা হলো গণমাধ্যম যাদের হাতে বিশ্ব তারাই পরিচালনা করছে। কেননা জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কি সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না কি এই গণমাধ্যম সমাজের জন্য হুমকি?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো গণমানুষের ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে একেবারে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস আদালত, কোম্পানি, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা, বাণিজ্যিক সংস্থাসহ সবাই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই মাধ্যমটিতে বহু ইউজার বা ব্যবহারকারী সমবেত হচ্ছে প্রতিদিন। ব্যবহারকারীদের অনেক গ্রুপও তৈরি হয়। তারা তাদের প্রোফাইলগুলো পরস্পরে দেখতে পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শুরুরদিকে বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার সুযোগ দিত। বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য হবারও সুযোগ দিত, ব্যক্তিগত পেইজ খোলার সুযোগসহ এ ধরনের আরোকিছু সুযোগ দিত। কিন্তু ইদানীং ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য কিংবা ইউজারদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য জনমত জরিপ, অনলাইন গেইম, ফিল্ম বা ভিডিও দেখার মতো আরও বহু সুযোগ দিচ্ছে। যা আগে কেউ কল্পনা করতেই পারতো না।

যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে উপস্থিতির জন্য খুব একটা খরচও লাগে না ব্যবহারকারীদের। একইভাবে খুব বেশি পড়ালেখাও জানার প্রয়োজন পড়ে না। এর কারণ হলো অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়াই বিভিন্ন ভাষা সাপোর্ট করে। অপরদিকে স্যোশাল মিডিয়াগুলোর ব্যবহার পদ্ধতি বা গঠন একইরকম প্রায়। এগুলোর ব্যবহারিক শব্দ কিংবা পরিভাষাগুলোও বেশ সহজ। ব্যবহারকারীরা সহজেই এগুলো ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে যতই দিন যাচ্ছে ততই এই মিডিয়াগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবহারকারীরা নিজেদের স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারে বলে এই যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই নিজের উপস্থিতি বজায় রাখতে আগ্রহী।

যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহারকারী এবং মিডিয়ার মাঝে দূরত্ব একেবারেই দিন দিন কমে যাচ্ছে। মিডিয়াগুলোর অ্যাডমিনেরা ইউজারদের পোস্টগুলো পাঠানোর ক্ষেত্রে খুবই কম বাধার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হবার মাধ্যমে বিচিত্র বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনায় অংশ নিয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার সুযোগ থাকার কারণেও যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে। এসবের বাইরেও ব্যক্তিগত পেইজ খোলার সুযোগ থাকায় যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ বাড়ছে। সমাজের যেসব লোক সাধারণত কিছুটা নিস্পৃহ এবং জনগণের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ খুব একটা নেই। তাদেরকেও যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস অসংখ্য ব্যবহারকারীর সঙ্গে শেয়ার করতে দেখা যায়।

যোগাযোগের সাইটগুলোতে পুরনো বন্ধুবান্ধবদের খুঁজে পাওয়া যায়, নতুন বন্ধুবান্ধব তৈরি করা যায় একইভাবে নিজেদের বৃত্তের বাইরের অনেককেও আমন্ত্রণ জানানো যায়।

কিন্তু গেল কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনগুলো যদিও বিভিন্ন সমাজের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক এলাকাভেদে তারতম্য রয়েছে, তবে এটাও ঠিক যে এই পরিবর্তনকে যেমন অস্বীকারও করা যাবে না তেমনি পরিবর্তন যে অপরিহার্য তাও বলার সুযোগ নেই।

এতোক্ষণ আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হল সেদিক থেকে এই মাধ্যমটিকে এমন এক দ্বিধারী ছুরির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যার একপাশ খুবই তীক্ষèধার এবং বিপজ্জনক আরেক পাশ নরম এবং বিপদহীন। তাই দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে এই যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারের ব্যাপারে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয় অর্থাৎ এই মাধ্যমটির সঠিক ব্যবহার যদি নিশ্চিত করা না হয় তাহলে নিঃসন্দেহে নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফেইসবুক ব্যবহারের নীতিমালায় উল্লেখ করা আছে ১৩ বছরের নিচে কেউ এই মাধ্যমটির সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু কার কথা কে শোনে। বেশিরভাগ শিশুকিশোরই নিজেদের বয়স বেশি করে দেখিয়ে এই সাইটের সদস্য হয় যা খুবই বিপজ্জনক।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ১৩ বছরের কম বয়সী পাঁচ থেকে আট মিলিয়ন শিশু ফেইস বুকের সদস্য। তদুপরি নবজাতকের জন্য ফেইসবুক আইডি তৈরি করা বা শিশুর প্রোফাইল তৈরি করে রাখাটাকে নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করে। এ ব্যাপারটা কোনো একটি দেশের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, বিশ্বজুড়েই এমনটি ঘটছে। কিন্তু শিশুরা কেন আসছে ফেসবুকে এ প্রশ্নটি উঠতেই পারে। আসলে ফেসবুকে শিশুদের উপস্থিতির কারণ দুটি। প্রথমটি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং তার প্রচণ্ড প্রভাব। দ্বিতীয়টি, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপের মতো ডিভাইসগুলোর সহজ ব্যবহার। যেভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে উঠুক না কেন, এটা যে শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইন্টারনেট নেটওয়ার্কটি বড়দের জন্যই করা হয়েছে। সে কারণেই ছোটোদের ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

এখানে এমন কিছু বিষয়ে অপরকে আমন্ত্রণ জানানো যায় যা ছোটোদের জন্য উপযোগী নয়। কিন্তু এই মাধ্যমে শিশু নিজেও সেই আমন্ত্রণ জানোতে পারে কোনোরকম বাধা ছাড়াই। এভাবে একটি শিশু বেড়ে ওঠার সূচনাতেই বিপথে চলে যাবার আশঙ্কা থাকে যা পুরো সমাজব্যবস্থার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শিশুদের অবাধ বিচরণের ওপর সুনিয়ন্ত্রণ আরোপ করা না গেলে শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথ সুগম না হবার পরিবর্তে এই মাধ্যমটি শিশুর সার্বিক অবক্ষয়ের ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।

বলাবাহুল্য শিশুরা এমন অনেক বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ে যে বিষয়ে তাদের অভিভাবকদেরও পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না। এমনকি শিশুরা অনেক সময় সাইবার ক্রিমিনালের মতো দুষ্ট লোকদের খপ্পরে পড়ে বাবার ব্যাংক একাউন্টসহ গোপনীয় বহু তথ্য দিয়ে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে বসে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শিশুদের শরীরের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন আর্থরাইটিস, ওবিসিটি বা স্থূলতা রোগ, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, একাকী নির্জনে থাকা, ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জেই গিড যথার্থই বলেছেন, পাঁচ বছর আগে একটি শিশু আনুমানিক ছয় ঘণ্টা সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কাটাতো। এখন কাটায় সাড়ে ১১ ঘণ্টার মতো। শিশু-কিশোরদের কাজকর্মে তাই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। খাবারের মতো বেঁচে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রির মতো প্রযুক্তিও শিশুদের জন্য একইরকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। আজকালের শিশুরা ডিজিটাল নেটিভসে পরিণত হতে যাচ্ছে।

শিশুদের সঙ্গে পার্কে, স্কুলে, বিনোদনকেন্দ্রে, রাস্তাঘাটে অনেক মূর্খ লোকও মোবাইলে ইন্টারনেটের কল্যাণে গণমাধ্যম নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। আসলে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কৌতূহল বাচ্চাদের থাকাটাই স্বাভাবিক কেননা তাদের মনটাই এখন সেগুলোর দিকে ঝুকছে। তাদের চিন্তা ভাবনা, স্বপ্ন কল্পনা সবকিছুই প্রযুক্তি নিয়ে। এগুলোকে তাই অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং দায়িত্বটা পড়ে মুরব্বিদের ওপর। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অযাচিত ছবি ছেড়ে দিয়ে মানুষের নীতি-নৈতিকতাকেও ধবংস করে দিয়া হচ্ছে। এবং কিছু কিছু লেখা পোস্ট করে মানুষের ধর্ম-কর্ম স্পর্কে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে মানুষের মাঝে হানা হানির পথ সৃষ্টি করে দেয়। এভাবে হাজারও সমস্যর পথ তৈরি করে দিচ্ছে এ মাধ্যমটি।  শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অভিভাবকগণ সতর্ক ও সচেতন হবেন এটা এখন সময়ের দাবি। তবে, ডেনা মাইট যেমন পাহাড় ধবংসের জন্য তৈরী করা হয়েছি মানুষের কল্যাণে। কিন্তু সে ডেনা মাইটকে মানুষ অনেক সময় মানুষের অকল্যাণেও ব্যবহার করছে এটা ডেনা মইটের দোষ নয়। দোষ ওই ব্যবহার কারীর। তাই আমরা সোশ্যাল মিডিয়াকে যদি খারপ কাজে ব্যবহার করি  সে দোষ মিডিয়ার নয় দোষ আমাদের। তাই আমাদের সকলকে যোগাগোগ মাধ্যমকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে হবে নয় নিজেরাই নিজেদের ধবংসের জন্য দায়ী থাকব।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 
শীর্ষ নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে