………………………………..প্রভাষক মোঃ ফেরদৌস আলম

 

ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে বাংলাদেশকে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যে কোন জটিল সমস্যা সমাধানে তরিৎ, বিচক্ষণ, গঠনমুলক ও ইতিবাচক সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে। এক্ষেত্রে তাঁর উপদেষ্টা মন্ডলী যথেষ্ট বিচক্ষণ, দেশপ্রেমিক এবং শিক্ষকের যথার্থ মর্যাদা দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রসঙ্গতঃ আবেদন জাতি গঠনের কারিগর একজন শিক্ষকও যেন শিক্ষক নিবন্ধন জটিলতায় উদ্ভূত এমপিওভুক্তি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ঝরে না পরে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর উপদেষ্টা মন্ডলীর বিন্দুমাত্র অবহেলা হবে না, এ বিশ্বাস শিক্ষক সমাজের আছে।

সরকার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবর্তন আনা হচ্ছে এমপিও নীতিমালায়। ইতোমধ্যে নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরী করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায়, যারা এমপিওভুক্ত নয়, কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নতুন পদে পদায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহ্মেদ বলেন- “আইসিটিসহ অনেক বিষয় নতুন করে চালু হলেও পদ সৃষ্টি করা হয়নি। শিক্ষক সংকটের কারণে এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয় পড়াচ্ছেন।” ২০১৮ সালে এসে আইসিটিসহ অনেক বিষয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সরকারি মহল স্বীকার করেন। মুলতঃ ২০০৫ সালে শিক্ষক নিবন্ধন আইন পাশের পর থেকেই ভুক্তভোগি দেশের কয়েক হাজার এমপিওভূক্ত ও নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে শূন্যপদে কয়েকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও নিবন্ধন পাশকৃত শিক্ষকের অভাবে উক্ত বিষয়সমূহে কোন প্রার্থী আবেদন করেন নাই। এ কারণে সম্পূর্ণ চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিষয় শিক্ষকের অভাবে পাঠদান ব্যহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন বিষয়ে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হয়েছে।

ফলে ম্যানেজিং কমিটিকে শিক্ষামন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, অভিভাবক ও সুধী মহলের নিকট বহুবার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অবশেষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদের কয়েক বছর ধরে চলমান এই অপূরণীয় ক্ষতির কারণ তৎকালীন বহুল আলোচিত “নিবন্ধন জটিলতার কারণে শিক্ষক সংকট সমস্যা” সমাধানে সমগ্র দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক পদে আবেদনের যোগ্যতা যথাক্রমে-“নিবন্ধন সার্টিফিকেটধারী/ইনডেক্সধারী/২০শে মার্চ ২০০৫ ইং তারিখের পূর্বে পাঠদানে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ আবেদন করতে পারবেন” মর্মে উল্লেখ করা হয়। যা অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রকাশিত উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সমূহের আবেদনের যোগ্যতার ৩য় অংশটি এনটিআরসিএ আইনের ১০(২) ধারার ব্রাকেটে বলা আছে।

যেহেতু বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধির নিয়ম-কানুন ১.১ ধারায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/০৫/১৯৮৯ইং তারিখের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ রেজিস্টার্ড দৈনিক পত্রিকাসমূহের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গ্রহণযোগ্য। আরও উল্লেখ্য যে, বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধির নিয়ম-কানুন ১.২ ও ১.৪ ধারা অনুসারে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরে, শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি- অধ্যক্ষ পিটিআই ইনষ্টিটিউট কিংবা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সমন্বিত যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে আবেদনকৃত প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদ যাচাই-বাছাই করা হয়। তারপর একজন ডিজির প্রতিনিধি, একজন সরকারী কলেজের সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ এবং একজন বোর্ড প্রতিনিধি- সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত প্রার্থী নিয়োগের জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত হন।

অতঃপর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক উক্ত প্রার্থী নিয়োগ ও যোগদান প্রাপ্ত হন। ইহাতে এনটিআরসিএ আইনের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত হয়। বিধায় উক্ত শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি সাপেক্ষে সরকারী অনুদান বাবদ বেতন এবং ভাতাদি প্রাপ্তির যোগ্য হিসাবে সরকারিভাবে অনুমোদিত হয়। ঢাকাসহ সমগ্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শূন্য পদে ২০০৫ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধনকৃত শিক্ষক সরবরাহের কোন আইনগত দায়বদ্ধতা ছিল না, কোন নিয়মও প্রণীত হয় নাই। আর ইনডেক্সধারী শিক্ষকগণের অন্য প্রতিষ্ঠানে পদায়নে শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদন থাকলেও তাঁদের নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে আবেদনের প্রশ্নই আসেনা।

সেহেতু বাধ্য হয়েই এনটিআরসিএ আইনের ১০(২) ধারার এমপিওভুক্তির জন্য স্বীকৃত ব্রাকেটে উল্লেখিত বৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকগণ প্রার্থী হিসাবে আবেদন করায় পূর্ব নিয়োগের ধারাবাহিকতায় উক্ত প্রার্থীগণকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বৈধপ্রার্থী হিসাবেই বিধিসম্মত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনের তাগিদে জরুরী মুহুর্তে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল অবধি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে কর্মরত উক্ত শিক্ষকগণের দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের অতুলনীয় অবদানের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করে ও শিক্ষক সমাজের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠানের এমপিওভূক্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদেরকে সরকারি অনুদান বাবদ বেতন এবং ভাতাদি প্রাপ্তির যোগ্য হিসাবে গণ্য করার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে।

কারণ এখানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত উক্ত শিক্ষকগণের এক নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান হতে অন্য নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে একই বিষয়ের শিক্ষক পদে পদায়ন হয়েছে মাত্র। এ প্রসঙ্গে রংপুরের বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, “যিনি একবার নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উত্তীর্ণ হয়েই বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং সরকার কর্তৃক এমপিওভুক্তির অধিকার পান তিনি যেখানেই পদায়ন হবেন, সেখানেই বৈধভাবে নিয়োগের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার পাবেন। তিনি আজীবন বৈধ- ঙহপব রং াধষরফ রং ধষধিুং াধষরফ। ইহা একটি স্বতঃসিদ্ধ নীতি।” প্রয়োজনে মানবিক কারণে জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কারণ মানুষের প্রয়োজনে আইন, আইনের প্রয়োজনে মানুষ নয়।

এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রথমদিকে সনদের মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত ভূল সিদ্ধান্ত দিলেও পরে এই স্বতঃসিদ্ধ নীতি উপলব্ধি করেই অন্যান্য শিক্ষা সনদের মত নিবন্ধন সনদের মেয়াদও আজীবন করেছেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিকরণ একটি অনির্ধারিত, দীর্ঘমেয়াদি, ধীরগতিসম্পন্ন এবং সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভারশীল প্রক্রিয়া।

এ কারণে এমপিওভূক্তির সময় সীমার নিশ্চয়তা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের পক্ষে নন-এমপিও শিক্ষককে দেয়া সম্ভব নয়। তাই ইনডেক্সধারী শিক্ষকগণ যেমন তাঁদের চাকুরীর ধারাবাহিকতা, জ্যেষ্ঠতা, বেতন স্কেলসহ বদলির সুবিধা ভোগ করেন। তেমনি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের আর্থিক অনটন ও যাতায়াত অসুবিধার কারণে যতদিন এমপিওভুক্ত হয় নাই ততদিন বাড়ির নিকটে পছন্দের ও সুবিধাজনক নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে পূর্বের নিয়োগের স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে নিয়োগ বদলি সুবিধা ভোগের নীতিগত স্বীকৃতি প্রয়োজন।

আর একটি মাত্র নীতিমালাই বিরাজমান এমপিওভুক্তির এই সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে এক বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষককে যদি অন্য বিষয়ের নতুন পদে পদায়নের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে এক নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অন্য নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের একই পদের শিক্ষক হিসেবে পদায়নের সিদ্ধান্তও অনায়াসে নিতে পারেন। উল্লেখ্য যে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলী নীতিমালা ২০১৮ তে মানবিক কারণসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বিবেচনা করে সরকার সম্প্রতি বিশেষ বদলী সুবিধার নির্দেশিকা জারি করেছেন।

এনটিআরসিএ আইন প্রনয়নের উদ্দেশ্য কখনোই বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের অন্য প্রতিষ্ঠানে পদায়নের কারণেই এমপিওভুক্তির সুযোগ রহিতকরণ নয়। তৎসঙ্গে উক্ত শিক্ষকের ১৩ বৎসরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে ভুলুন্ঠিত করে এবং “শিক্ষকের মর্যাদা” খর্ব করে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় চুড়ান্তভাবে ঝরে পরার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা নয়। এখানে উল্লেখ্য যে, এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “শিক্ষার অধিকার মানে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অধিকার” The right to education means the right to a qualified teacher.”

বিধায় যাঁরা বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, কিন্তু এমপিওভুক্ত নয়। তাঁদের অন্য কলেজে কিংবা নতুন পদে পদায়নের কারণে এমপিওভুক্তির প্রতিবন্ধকতা দুর করা দরকার। যেহেতু এরূপ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এনটিআরসিএ আইনের বা কোন বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না, সেহেতু এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ তাঁদের আইনের ২১ অথবা ২২ ধারার বিধি প্রণয়নের ক্ষমতার মাধ্যমে ইনডেক্সধারী শিক্ষগণের মত বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণও প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের বদলি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন- মর্মে প্রবিধান প্রণয়ন করে এমপিওভুক্তির খসড়া নীতিমালায় বিষয়টি সংযুক্ত করলে পদায়নকৃত শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জটিলতা দুরীভূত হবে। তাই নিবন্ধন জটিলতায় উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় আইনমন্ত্রী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, শিক্ষা সচিব, সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলী, চেয়ারম্যান-এনটিআরসিএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট জরুরী ভিত্তিতে একটি কল্যাণকর, ন্যায়সঙ্গত ও ইতিবাচক সমাধান দেশের সুফল প্রত্যাশি শিক্ষক সমাজসহ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষগণ বিনীতভাবে প্রার্থনা করছেন।

 

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে