ডেস্ক রিপোর্টঃ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে বার্ষিক রাজস্ব আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা।
তিনি সম্প্রতি বাসসকে জানান, শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে পর্যটক সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
পরিচালক বলেন, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরে এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা।
ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফরকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ পরিদর্শন করেন। সেই সময় তাঁর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারত সরকার রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা অনুদান দেয়। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর কুঠিবাড়ি চত্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম সংবলিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
আফরোজা খান মিতা বলেন, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ‘শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়ার সম্প্রসারিত উন্নয়ন কার্যক্রম’ এর অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ।
বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-র তৎকালীন সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রীংলা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থাপতি রবিউল হোসাইন। এর মাঠ পর্যায়ে কাজ সম্পাদন করছে গণপূর্ত অধিদফতর। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ এ বছরেই শেষ হবে।
আফরোজা খান মিতা বলেন, শিলাইদহের সব উন্নয়ন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাগম যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি রবীন্দ্রভক্ত ও শিল্পীদের সুরেও মুখরিত হবে এ প্রাঙ্গণ। অন্যদিকে সমৃদ্ধ রিসার্স সেন্টার গবেষকদের কাজে সহায়ক হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, বর্তমানে কুঠিবাড়িতে আগের চেয়ে দর্শনার্থীর আগমন বেড়েছে। তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র দেখছে। বর্তমানে এখানে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে তা সম্পন্ন হলে এটি আরো দৃষ্টিনন্দন হবে।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোখলেসুর রহমান ভুঁইয়া জানান, কুঠিবাড়িতে ক্রমেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত ভবনটি জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরের নীচতলা ও দোতলায় ১৬টি কক্ষেই তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।
তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রবেশ মূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশী দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫ টাকা এবং সার্কভুক্ত বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমুল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিন এবং সরকারি ছুটির দিনে জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্বস্থল শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিনামূল্যে পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় রেস্ট হাউস, লাইব্রেরী কাম রিসার্স সেন্টার, উন্মুক্ত মঞ্চ, ক্যাফেটোরিয়া, কারপার্কিং, আনসার ছাউনীসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে একদিকে যেমন এখানকার পরিবেশ পর্যটকবান্ধব হবে অন্যদিকে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং সেই সঙ্গে সরকারি রাজস্ব আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পাবে।
মোকলেসুর রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বোটে পদ্মায় থাকতেন সেই বোটের রেপ্লিকা রয়েছে কুঠিবাড়ির পশ্চিমে বকুলতলার পাশের পুকুরে। অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন এবং চড়তে চান। এটি সংরক্ষিত আছে, তাই শুধুমাত্র প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত ‘চঞ্চলা’ ও ‘চপলা’ নামের বজরা ছিল। একটির তথ্য না জানা থাকলেও শিলাইদহে কুঠিবাড়ির জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় ‘চপলা’ বজরাটি রাখা আছে। এসব বজরায় চড়ে সময় কাটিয়েছেন এবং তার অনন্য সব সৃষ্টিতে নিমগ্ন থেকেছেন।
শিলাইদহ শহর থেকে বেড়াতে আসা নুরুল ইসলাম জানান, তিনি পরিবারকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছেন। চারপাশ আগের চেয়ে সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো রয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল। তবে অধিক দর্শনার্থীর তুলনায় শৌচাগার অপ্রতুল। এর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বসবার জন্য আরো আসন বাড়ালে ভাল হয়।

বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে