স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের করা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৩ মে) ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার আদালত এ আদেশ দেন।

তবে, জামিন পেতে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকা দিতে হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন- এ জন্য তার পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষ হওয়ার পর জামিন শুনানির আদেশ পরে দেওয়া হবে বলে জানান আদালত।

দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে পরে বিচারক বলেন, ‘নথিপত্র পর্যালোচনা করে দ্রুততম সময়ে আদেশ দেওয়া হবে।’

শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, ‘আসামির কাছ থেকে আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।’

অন্যদিকে রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি বলেন, ‘এজাহারে সে রকম কোনো আলামতের বর্ণনা নেই। যে আলামতের কথা বলা হচ্ছে, তা পরে ম্যানিপুলেট করা।’

তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলের যে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনে এ মামলা করা হয়েছে, বাংলাদেশে তার ব্যবহার অত্যন্ত কম, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও এ আইন প্রয়োগের তেমন নজির নেই। ভারতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এ আইন ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

রোজিনার পক্ষে শুনানিতে আরও ছিলেন আইনজীবী আশফ উল আলম, প্রশান্ত কর্মকার ও আমিনুল গণি টিটো।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্লাস্টের মশিউর রহমান এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মো. আবদুর রশীদও উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ জসিম এ নির্দেশ দেন।

এর আগে রোজিনার বিরুদ্ধে করা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের করা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মামলা ডিবিতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক।

এদিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে করে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় সাংবাদিক নেতারা তার মুক্তি দাবি জানান।  

এ ছাড়াও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি বলেছে, বিষয়টির দিকে তারা নজর রাখছে এবং এটি স্পষ্টতই উদ্বেগের বিষয়।

প্রসঙ্গত, সচিবালয়ে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শাহবাগ থানা পুলিশে সোপর্দ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সোমবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ৮টার পরে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টিম সচিবালয় থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যায়। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিব্বির আহমেদ ওসমানী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে