cyberattack malware

বিডি নীয়ালা নিউজ( ২১জুলাই ২০১৬ইং)- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্কঃ যুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতারণার কৌশলও ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করে চলেছে সাইবার অপরাধীরা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শনাক্ত হয়েছে এমনই দুই মোবাইল ম্যালওয়্যার— ‘ব্যাংকার-ট্রোজান’ ও ‘এসএমএস-ট্রোজান’। ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ভেদ করে গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিতে এ ধরনের নানা ম্যালওয়্যার ব্যবহার করছে সাইবার অপরাধীরা। বৈশ্বিকভাবে মোবাইল ম্যালওয়্যার ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে চীনের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

রুশ সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাসপারস্কি সম্প্রতি ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) সাইবার ঝুঁকি-বিষয়ক একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে সাইবার ঝুঁকির বিষয়টি।

সমীক্ষা ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যবহূত মোট স্মার্টফোনের ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর ভাইরাসে আক্রান্ত। মোবাইল ম্যালওয়্যারে আক্রান্তের হার বিবেচনায় চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। চীনে ব্যবহূত মোট স্মার্টফোনের ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ এ ধরনের ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত।

ক্যাসপারস্কি সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক (কেএসএন) ডাটা বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাসপারস্কি ল্যাব। কেএসএন একটি ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যান্টিভাইরাস নেটওয়ার্ক; যা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার নিরাপত্তা কমপোনেন্ট নিয়ে কাজ করে। ঝুঁকি-বিষয়ক তথ্য সরবরাহে আগ্রহী কেএসএন গ্রাহকদের তথ্যের ভিত্তিতে সমীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১৩টি দেশের ক্যাসপারস্কি নিরাপত্তা পণ্য ব্যবহারকারীরা এ সমীক্ষায় অংশ নেন। যদিও প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কতজন তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ও ভুটানে ক্যাসপারস্কি সফটওয়্যারের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান অফিস এক্সট্রাক্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক সেলফোনই এখন ম্যালওয়্যারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়ায় এ ধরনের ফোনগুলোয় আক্রমণের হারও বেশি। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এমন আক্রমণের ঝুঁকিতে চীনের পরই বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা রয়েছেন বলে তথ্য উঠে এসেছে। এর প্রধান দুটি কারণের একটি হলো, ম্যালওয়্যার প্রতিরোধী সফওয়্যার ব্যবহার এখনো তুলনামূলক অনেক কম এ দেশে। আর অন্যটি হলো সচেতনতার অভাব। ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

২০১৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ‘ব্যাংকার-ট্রোজান.মার্চার.’ ম্যালওয়্যার সম্পর্কে সচেতন করেছিল ক্যাসপারস্কি ল্যাব। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন আঙ্গিকের ‘মার্চার’ ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছে তারা। বিশ্বব্যাপী ব্যবহূত প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাংকিং অ্যাপ ম্যালওয়্যারটিতে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এসব অ্যাপের বেশির ভাগই ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর মালিকানাধীন।

সাইবার অপরাধীদের মধ্যে র্যানসমওয়্যার ছড়ানোর মাধ্যমে অর্থ আদায়ের রীতি নতুন নয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ‘র্যানসম-ট্রোজান’ ম্যালওয়্যার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে এ সময় ৬৪ শতাংশ মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারী এ র্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছেন, যা ২০১৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাইবার অপরাধ সংঘটনে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৩টি ম্যালওয়্যার ইন্সটলেশন প্যাকেজ শনাক্ত করেছে ক্যাসপারস্কি ল্যাব। এটা গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ গুণ এবং তৃতীয় প্রান্তিকের চেয়ে ১ দশমিক ২ গুণ বেশি।

জানুয়ারি-মার্চ সময়ে অসংখ্য ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ও অন্যান্য অবজেক্ট শনাক্ত করা হয়েছে। র্যাংকিংয়ে এগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অ্যাডওয়্যার প্রোগ্রাম। মোবাইল ডিভাইস গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে নিতে অ্যাডওয়্যার প্রোগ্রামের ব্যবহার গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। যদিও এ সংখ্যা গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ৫২ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় কম।

ক্যাসপারস্কি র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এসএমএস-ট্রোজান। গত বছর চতুর্থ প্রান্তিক শেষে এসএমএস-ট্রোজান ছড়ানোর হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছেছিল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ম্যালওয়্যারটির ব্যবহার দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। র্যাংকিংয়ে ট্রোজান স্পাইওয়্যার প্রোগ্রামের দখল ১০ দশমিক ১ শতাংশ। পাশাপাশি ট্রোজান ও রিস্কটুল মোবাইল ম্যালওয়্যার ছড়ানোর হার যথাক্রমে ৯ দশমিক ১ ও ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

র্যাংকিংয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা ম্যালওয়্যারগুলো হলো— ব্যাকডোর, ট্রোজান-ডাউনলোডার, ট্রোজান-ড্রোপার, ট্রোজান-ব্যাংকার ও ট্রোজান র্যানসম। প্রথম প্রান্তিকে এগুলো ছড়ানোর হার যথাক্রমে ২, ১ দশমিক ৪, ১ দশমিক ৩, ১ দশমিক ২ ও দশমিক ৮ শতাংশ।

এদিকে দেশে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জুন শেষে দেশে সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৬ হাজার। এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সেলফোনে ইন্টারনেট সংযোগই ৫ কোটি ৯৬ লাখের বেশি। তবে ক্রমবর্ধমান ম্যালওয়্যার আক্রমণের বিষয়ে সচেতন নন এ বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী। সামগ্রিকভাবে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি অনিশ্চিত রেখেই ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে এগিয়ে চলছে দেশ।

সেলফোনের পাশাপাশি বাংলাদেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীরাও বড় ধরনের সাইবার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের মোট কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ৬৩ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত। কম্পিউটার ম্যালওয়্যারে আক্রান্তের হার বিবেচনায় বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই। অর্থাত্ ম্যালওয়্যার বা নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে, কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই সবাই তা ব্যবহার করছেন। ফলে অরক্ষিত থাকায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন এদেশের ব্যবহারকারীরা। তবে পারসোনাল কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এ চিত্র অনেকখানিই বদলে গেছে। মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারকারীরা এখনো বড় ধরনের বিপদে না পড়ায়, এ ব্যাপারে সেভাবে সচেতন হননি

 

 

 

bonikbattra

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে