মারুফ সরকার : রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপু ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত ১১ টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এ্যাপোলো হাসপাতাল সংলগ্ন ব্লক নং- বি, রোড নং- ১১, বাড়ি নং- ৩৫৩, ৩য় তলা ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং ৩৫৩নং বাড়ির পাশের একটি সিসি ক্যামেরা ছিল আগের দিন সেই ক্যামেরা খুলে ফেলে। তারপর থেকেই প্রায় ৩.৫ বছর শেষ হয়ে গেলো আজো তপুর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তপুর মা আলহাজ¦ সালেহা বেগম প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনবার দেখা করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ৩৭ বার দেখা করেছেন, র‌্যাবের ডিজির সাথে ২ বার দেখা করেছেন। এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছেলেকে ফিরিয়ে দেবার দাবি তুলেছেন। তপুর বাবা মো. মোশাররফ হোসেন ছেলেকে না ফিরে পেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ মে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

তপুকে সবচেয়ে বেশী আদর করতো তার প্রিয় নানী নজিবেরনেছা। কদিন আগেও বিড়বিড় করে বলছিল তপু কৈ। তপুকে আমার কাছে এনে দাও। আমি ওকে দেখে মরতে চাই। তপুকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। এই কথা বলতে বলতেই একসময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরবর্তীতে কাকরাইলে ইসলামি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তিনি সুস্থ অবস্থায় প্রায়ই বলতেন প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের মা। সে কি পারে না আমাদের কোলে আমাদের প্রিয় সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও আজো তপু ফিরে আসেনি। তপুকে যেদিন গুম করা হয়েছিল তার ৮ দিন আগে নর্থসাউথে এমবিএ তে ভর্তি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের ১৫ জুলাই তপু জন্মগ্রহণ করেন। এখন ১৫ জুলাই আসলে তপুর জন্মদিনের পরিবর্তে সকলের চোখে জল ছাড়া আর কিছু আসে না। তপুর নানীর শেষ ইচ্ছা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পূরণ করতে পারেন না ? তিনি হয়তো আর ফিরবেন না। যদি না ফেরার দেশে চলে যান সারাজীবনের জন্য নাতিকে না দেখার আকুতি কষ্ট যন্ত্রনা নিয়ে চলে যাবেন। এর জন্য কে দায়ী থাকবেন ? তপুর মা সালেহা বেগম খুবই অসুস্থ। তিনি আগের মত কথা বলতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলেন তপুর বাবা তপুকে দেখে যেতে পারলো না। তপুর প্রিয় নানী তপুকে দেখে যেতে পারবে কি না জানি না। আমি মা হিসেবে তপুকে দেখে মরতে চাই। আমার পরিবারের সকলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক।

তপু যতদিন ছিল প্রতিটি মুহুর্ত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর গুণকীর্তন করেই প্রতিটি সময় কাটাতো। ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে এতবেশী গতিশীল করেছিল সে কারণে শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে পুরুস্কৃত হয়েছিলেন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গণে তপুর অনেক অবদান ছিল। ব্যাডমিন্টনে একবার ঢাকার সেরা হিসেবে পুরস্কার জিতে আনে। ঘরের চারদিকে তাকালেই তপুর পুরস্কার গুলো চোখে পড়ে। অথচ যে ছেলেটি এই অর্জনগুলো করলো সে এখন কোথায় ? কেমন আছে কি করছে কি খাচ্ছে আমরা কেউ জানি না। আমার বড় ছেলে ডাক্তার। সেও অনেক চেষ্টা করছে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেছে কিন্তু কোন হদিস পায়নি। এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। আমার তপুকে ফিরিয়ে দিন। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে