160420070444_west_bengal_election_640x360_bbcbangla

বিডি নীয়ালা নিউজ(২০ই এপ্রিল১৬)-আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনঃ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এবার চির বৈরী দুই দল – কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট আসন সমঝোতা করে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলা করছে বেশীরভাগ আসনে।

কিন্তু কংগ্রেসের সবথেকে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে এই দুই জোট সঙ্গীই আবার নিজেদের মধ্যেই ভোটের লড়াইতে নেমেছে অনেক আসনে।

বামদের সঙ্গে জোট করতে সবথেকে আগ্রহী ছিলেন যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তাঁর জেলাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে ১০টি আসনে।

কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার ওপর ভরসা করে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও খুব চেষ্টা করছে এই জেলায় নিজেদের জমি খুঁজে পেতে।

মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রামে একসঙ্গে কংগ্রেসের বন্দেমাতরম আর সি পি আই এমের ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে দেখছিলাম, কিছুদিন আগে স্বপ্নেও ভাবা যেত না।

এই নবগ্রাম থেকেই ভোটে জিতে নিজের পরিষদীয় রাজনীতি শুরু প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর।

160420070034_anisur_rahman__640x360_bbcbangla

এই এলাকা সি পি আই এমের সঙ্গে কংগ্রেসের অনেক রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখেছে, কিন্তু এবছরের বিধানসভা নির্বাচন সেই একরকম অসম্ভবকেই বাস্তব করে তুলেছে – কংগ্রেসের হাতে হাত মিলিয়েছে বামপন্থীদের কাস্তে হাতুরী।

জোট প্রার্থীর হয়ে যৌথ প্রচারে বেরনো কয়েকজন কংগ্রেস আর সি পি আই এম কর্মীকে জিগ্যেস করেছিলাম এতদিন ধরে লড়াই করে এবারে একসঙ্গে প্রচার করার সময়ে কী মনে হচ্ছে?

তাঁদের কেউ বলছিলেন যে লড়াই হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে আর এক না হলে চলছে না; অন্য কারও কথায়, তাঁদের নেতা অধীর চৌধুরী ঠিক করেছেন জোট হবে, তাই বামদের হয়ে নেমেছি।

মুখে বলছেন বটে, কিন্তু চির বৈরী দলের সঙ্গে জোট বাঁধা এখনও অনেক কংগ্রেস বা বামপন্থী কর্মীই যে মন থেকে এই জোট মেনে নিতে পারেন নি, সেটা বুঝতে বেশী বেগ পেতে হল না।

তবে দুই দলের সমর্থকরাই বলছেন, নেতারা যখন মেনে নিতে পেরেছেন, তখন তাঁদেরও মানতে হবে।

কট্টর সি পি এম বিরোধী আর কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যাকে নিজের মায়ের সম্মান দেন, বুন্দাইডাঙা গ্রামের বৃদ্ধা দূর্গাদাসী প্রধানও মেনে নিয়েছেন প্রিয় নেতার কথা।

160420065848_adhir_choudhury__640x360_bbcbangla

তিনি বলছিলেন, “অধীরই আমার বেটা.. আমার নিজের তো বেটা নাই! ওরা (সি পি আই এম দলের কথা বোঝাচ্ছিলেন তিনি, যে দলটার নামও মুখে আনেন না) আমার যা সর্বনাশ করেছে.. ঘরে আগুন দিয়েছে,মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিল – এখনও পা ভাঙ্গা.. তারপরেও জোটে ভোট দিতে বলেছে আমার বেটা অধীর, তাই হবে, ওদেরই ভোট দিব! আর কোনও কথা বলব না।”

এই মুর্শিদাবাদ জেলা চিরকালই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেবার কংগ্রেস দল এই জেলায় জিতেছিল ১৪টি আসনে আর তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছিল একটি আসনে।

আবার বামপন্থীরাও যথেষ্ট শক্তিশালী এখানে – বামফ্রন্ট গত বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছিল ৭টি আসন। আর শুধু সি পি আই এম নয়, ছোট শরিক ফরোয়ার্ড ব্লক এবং আর এস পির সংগঠনও যথেষ্ট মজবুত এই অঞ্চলে।

তাই কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট – দুই দলের মধ্যেই টক্কর চলতে থাকে এখানে – শুধু ভোটের জন্য নয় – রাজনৈতিক জমি দখলেও লড়াইও এখানে নিয়মিত চলেছে। কেউই নিজের জমি ছাড়তে রাজী হয় না এখানে।

জেলার ২২টি আসনের মধ্যে যে দশটিতে জোট সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছে, ডোমকল তার মধ্যে একটা।

160420070312_west_bengal_election_640x360_bbcbangla

ডোমকলে সি পি আই এমের প্রার্থী – বামফ্রন্ট সরকারে দীর্ঘদিনে মন্ত্রী আনিসুর রহমান। একটা গ্রামে প্রচার করার সময়ে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।

জানতে চেয়েছিলাম সারা রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট – কিন্তু তাঁর কেন্দ্র বা আরও নয়টা কেন্দ্রে কেন জোট বাঁধতে পারল না কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট।

তাঁর কথায়, “এটা অস্বস্তিকর তো বটেই, কিন্তু এটাই কঠিন বাস্তব। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা দুই দলের কাছেই। এই আসনে সি পি এম বহু দশক ধরে জিতে আসছে। এখান থেকে আমি নিজেও কুড়ি বছর মন্ত্রী। তাই এই আসনটা কী করে কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের কর্মীদেরও তো একটা চাপ আছে দলের প্রতীকটা রাখার জন্য। আবার অধীরবাবুর সমর্থকদেরও নিশ্চয়ই চাপ ছিল। তাই লড়াই হচ্ছে এখানে।“

সারা রাজ্যে জোটের হয়ে কথা বললেও নিজের জেলা মুর্শিদাবাদের প্রায় অর্ধেক আসনে বামফ্রন্টের সঙ্গে লড়াইতে নেমেছেন কেন, তারই ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, এক সংবাদ সম্মেলনে।

“আসন ভাগাভাগির নিয়ম ঠিক হয়েছিল যে যেখানে জিতেছে, সে সেখানে লড়বে। কংগ্রেসের জেতা ছয়টি আসনে বাম শরিকরা প্রার্থী দিয়ে দিল, সি পি আই এম কোনও প্রতিবাদ করল না দেখে অবাক লাগছে। সি পি আই এম দলের মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের একটা অংশ হয়ত চায় নি যে এখানে ঠিকমতো জোট-টা হোক,” বলছিলেন অধীর চৌধুরী।

এই জেলায় জমি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা অনেকদিন ধরেই করছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে এই জেলায় এসেছেন ভোট চাইতে।

এর আগে কংগ্রেস নেতা হুমায়ূন কবীর বা হালে আরেক হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা মান্নান হোসেন আর তাঁর ছেলে সৌমিকে হোসেন যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। কংগ্রেস – বামফ্রন্ট – জোট সঙ্গীদের এই লড়াই থেকে

স্বাভাবিকভাবেই লাভ পেতে চেষ্টা করছে তৃণমূল। সৌমিক হোসেনও প্রার্থী হয়েছেন ওই ডোমকলেই, যেখানে কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের লড়াই হচ্ছে।

এক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে নিয়ে এসে চমক দিয়ে প্রচুর ভিড় জড়ো করেছিলেন সৌমিক হোসেন।

160420070605_west_bengal_election_640x360_bbcbangla

সেই রোড শোয়ের মধ্যেই বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “৩৪ বছর বামফ্রন্টের মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এই ডোমকলের কোনও উন্নয়ন হয় নি। সি পি এম আর কংগ্রেস লুটেপুটে খেয়েছে। যা করার মমতা ব্যানার্জীই করেছেন। তাই দেখুন হাজার হাজার মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছেন।“

কংগ্রেসের যে দুটি শক্ত ঘাঁটি ছিল আগে, তার মধ্যে মালদা জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই নিজেদের সংগঠন কিছুটা মজবুত করে ফেলেছে।

কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মুর্শিদাবাদে এখনও সেরকম কিছু সাফল্য পান নি মমতা ব্যানার্জী।

বাম-কংগ্রেস – দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে যে সব জায়গায় লড়াই হচ্ছে, তার থেকে তৃণমূল কংগ্রেস কিছুটা নির্বাচনী লাভ ঘরে তুলতে পারে কী না, সেটাই এখন দেখার।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে