ডেস্ক রিপোর্টঃ সরকারি চাকরিতে মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে কোটা প্রথা যতটা সম্ভব তুলে দেওয়ার সুপারিশ করছে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি। তবে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারে আদালতের রায় থাকায় এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাইবে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে কমিটি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার, বাতিল ও পর্যালোচনার জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে কোটা নিয়ে কাজ করছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে কোটা সংস্কার পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটা নিয়ে কমিটি তাদের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তাতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। শফিউল আলম জানান, আমরা মাসখানেক কাজ করলাম। সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত। আমাদের কমিটির মোটামুটি সুপারিশ হলো— কোটা অলমোস্ট উঠিয়ে দেওয়া, মেধাকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে সুপ্রিম কোর্টের একটা রায় আছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা প্রতিপালন ও সংরক্ষণ করতে হবে এবং যদি খালি থাকে তা খালি রাখতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত, যতদূর সম্ভব কোটা বাদ দিয়ে মেরিটে চলে যাওয়া। এখন সময় এসেছে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় যাওয়ার। এটা কমিটির প্রাথমিক অগ্রগতি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বর্তমানে থাকা ৩০ শতাংশ কোটার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাইবে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এ সংক্রান্ত কমিটি পুরোপুরি বুঝতে না পারার কারণেই এ বিষয়ে আদালতের মতামত চাওয়া হবে। সরকার কোর্টের কাছে মতামত চাইবে। যদি কোর্ট এটাকেও বাদ দিয়ে দেয় তাহলে কোটা থাকবে না। আর কোর্ট যদি বলে ওই অংশটুকু সংরক্ষিত রাখতে হবে, তাহলে ওই অংশটুকু (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) বাদ দিয়ে বাকি সব উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ আদালত যে মতামত দেয় সেটাই প্রাধান্য পাবে। এখন আদালত কী বলে তার ওপরই নির্ভর করছে বিষয়টি। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কোর্টের পর্যালোচনাও নির্বাহী বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।

কোটা পুরোপুরি তুলে দিলে অনগ্রসর জনপদ এবং গোষ্ঠীর কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি উনারা অগ্রসর হয়ে গেছেন। এখন আর কেউ অনগ্রসর নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে ১ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয়ে থাকে মেধার ভিত্তিতে। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিন দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক অবরোধ করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

তাদের আন্দোলনে রাজধানী অচল হয়ে পড়লে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। অবশ্য পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে। আবারও নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকলে সরকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গত ২ জুন একটি কমিটি করে। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই কমিটিতে সদস্য রাখা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), অর্থ বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবকে। কিন্তু কমিটির তৎপরতা না দেখে আন্দোলনকারীরা পুনরায় আলটিমেটাম দিলে কোটা পর্যালোচনা কমিটি গত ৮ জুলাই তাদের প্রথম সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত  দেশি-বিদেশি সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটিকে প্রথমে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে গত ১৯ জুলাই এই কমিটির মেয়াদ আরও ৯০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়।

B/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে