ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ২০১০ সালের পর ২০১৯ সালে এসে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর দাবীর প্রেক্ষিতে এমপিও ভূক্তির যে, পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তা সত্যিই প্রশাংসার দাবীদার। এই এমপিও ভূক্তির সবচেয়ে আলোচিত দাবী ছিল যেসব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদ এক যুগের অধিক তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এমপিও দিতে হবে। সরকারী বেতন-ভাতা না পেলেও এসব প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতির পর থেকে অদ্যাবধি পাঠদান অব্যাহত রেখে সরকারের গৃহিত শিক্ষার মান উন্নয়ন কার্যক্রমে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে ভুমিকা পালন করেছে তারাই সর্বাগ্রে এমপিও পাওয়ার দাবীদার। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও ভূক্তির যে ৪টি বিচারিক মানদন্ডের শর্ত যথাঃ স্বীকৃতির মেয়াদ, কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাশের হার ৭০% এর উপর হতে হবে বলে উল্ল্যেখ করেছেন তা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের প্রত্যাশা করা মানবিক কারনে কাম্য নয়। আগে সরকারী বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। তার পরে তাদের উপর পর্যায় ক্রমে শর্ত পুরনের চাপ প্রয়োগ করতে হবে। একটা প্রবাদ আছে “শাসন করা তারেই সাজে,আদর আছে যার মাঝে”। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা মন্ডলীর সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, হত-দরিদ্র নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধণাঢ্য পরিবারের কিংবা তারকা মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য ভীড় জমায় না। বরং হত-দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যাদের বই কেনার পয়সা নাই,বেতন দেবার সামর্থ নাই, পেটে ভাত নাই, গামেন্টস, ইপিজেড, কৃষি জমিতে কিংবা কারখানায় কাজ করে, বাবা দিনমজুর তারাই নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তাদের কাছে ৭০% এর উপরে পাশের হার কিংবা জিপিএ-৫ রেজাল্ট প্রত্যাশা করা কতটা বাস্তব সম্মত কর্তৃপক্ষ একটু ভেবে দেখবেন কি? এই বর্ণনার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত একটি হতভাগ্য নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদী বিধৌত প্রত্যন্ত এলাকা মঙ্গাপীড়িত গঙ্গাচড়ার উপজেলার কোলঘেষে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের একটি ক্যানেলের ধারে প্রতিষ্ঠিত মাগুড়া কলেজ যার ইআইআইএন নম্বর ১২৫০৫২, কলেজ কোড নং ৬৬৫৫ এবং ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৮ বছর ধরে বিনা বেতনে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারী বৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করে অত্র এলাকার ঝড়েপড়া নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার যে, সুযোগ করে দেন তার বিনিময়ে নীলফামারী ৪ আসনের এমপি প্রয়াত কর্ণেল (অবঃ) মারুফ সাকলান সরকারী পৃষ্টপোষকতায় একটি চার তলা ভবন ও শেখ রাশেল ডিজিটাল ল্যাব উপহার দিলেও তারা এখনও এমপিও ভূক্তির স্বাদ পাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জেনে আরো খুশি হবে যে, ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অত্র কলেজের ১৯৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯০ জন উত্তীর্ণ হন। আমরা স্বীকার করছি যে, বিগত ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সমগ্রদেশে ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে যে ফলাফল বির্পযয় হয়েছে আমরাও দৈবক্রমে কিছুটা ফলাফল বির্পযয়ের স্বীকার হয়েছি। তজ্জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখীত ও লজ্জিত এবং আমরা এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে ভবিষ্যতে কখনোই এর পুনরাবৃত্তি হবে না বরং এদেশকে আরো ভাল রেজাল্ট উপহার দিতে সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। উক্ত প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতার শুরু এবারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পাশের হার প্রায় ৯৭% অর্জন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে রংপুর বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার এক উজ্জল সম্ভাবনা থাকলেও ২০১০ সালের পর ৯ বছর অপেক্ষা করেও যদি ২০১৯ সালেই কলেজটি এমপিও ভূক্ত না হয় তবে শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ নিরুৎসাহীত হয়ে কলেজটি এবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আবারো ১০ বছর পর এমপিও ভূক্তির জন্য অপেক্ষা করলে অত্র কলেজের অনেক শিক্ষকই বিনাবেতনেই অবসরে যাবেন।

এমতাবস্থায় জনস্বার্থে মাগুড়া কলেজটি ২০১৯ সালেই এমপিও ভূক্তি করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত ভাবে আবেদন করছি।

লেখক কলামিষ্ট প্রভাষক মোঃ ফেরদৌস আলম
মাগুড়া কলেজ, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে