সাব্বির আলম বাবু, ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পানীয় তালের রস। যদিও বর্তমানে এই প্রাকৃতিক পানীয় খুবই অপ্রতুল।

কিন্তু এ জেলায় এখনো তালের রসের দেখা মেলে।গ্রীষ্মের প্রচ- গরমে মনকে সতেজ, ঠান্ডা আর চোখে ঘুম আনতে তালের রস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রতি গ্লাস তালের রস এখানে ২০ টাকা করে বিক্রয় হচ্ছে।এমন বক্তব্য গাছি ও ভোক্তাদের। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় গাছি কবির হাওলাদার সাথে। তনি বলেন, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাথান বাড়ী গ্রামে এসেছেন তরমুজ চাষ করতে। তরমুজ ক্ষেতের পাশেই রয়েছে জটা তাল গাছ। সেখান থেকে রস সংগ্রহ করে প্রতিদিন আয় করেন প্রায় ৫০০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, ফালগুন, চৈত্র ও বৈশাখ এই ৩ মাস তালের রস সংগ্রহ করা যায়। যে তাল গাছে তাল ধরে না তার জট ও যে গাছে তাল ধরে উভয় প্রকার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। ভোলায় তালের রস সংগ্রহের চিত্র তেমন দেখা যায় না। তাই এর রসের চাহিদা অনেক বেশি। অনেকেই শখের বসে দূর দূরান্ত থেকে এখানে এসে তালের রস পান করে যান। কবির হাওলাদার আরো জানান, তার নিজ গ্রামে ১৫ টা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এবছর এখানে তরমুজ চাষ করতে এসে কাজের ফাঁকে ক্ষেতের পাশে থাকা একটা জটা তাল গাছ থেকে প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে তিন ধাপে ২০-২৫ গ্লাস রস সংগ্রহ করি। প্রতি গ্লাস রস ২০ টাকা করে ও প্রতি কেজি গুড় ২৫০/৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, গরম যত বেশি হয় তাল গাছে রস তত বেশি হয়।

পাশের গ্রাম থেকে রস পান করতে আসা সম্ভনাথ দাস ও সবুজ ঢালী জানান, এখানকার তালের রস ভেজাল মুক্ত, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমাদের জেলাতে তালের রস সংগ্রহ করা হয় না। তাই এর চাহিদা অনেক বেশি। দেউলা রজ্জব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল কুদ্দুস বলেন, এখানকার তালের রস ভেজাল মুক্ত, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমাদের উচিত বেশি করে তালগাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা।

তালগাছ থেকে আমরা শুধু রসই পাই না, এতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়। সাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মৃধা জানান, বর্তমানে তাল গাছের সংখ্যা কমে গেছে। তাই তালের রস পাওয়া যায় না। রস সংগ্রহের কাজটি বেশ কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে তালের রসের মতো সুস্বাদু পানীয়। বোরহানউদ্দিন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: প্রসেনজিৎ দে বলেন, পাকা তালের রসের পুষ্টি গুন: প্রতি ১০০ গ্রাম রসে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। এছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে: তালে শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্যান্সারের মত রোগও প্রতিরোধ করে। উপজলো কৃষি র্কমকর্তা কৃষিবিদ এইচ এম শামীম বলেন, এটা একটা লাভজনক পেশা থাকলেও গাছে ওঠা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তালের রস একটি পুস্টিকর পানীয়। গরমে এ রস পান করলে মানুষের মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের অসচেতনতার কারণে ধীরে ধীরে তাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমাদের আশে পাশে ও রাস্তার দুইধারে বেশি করে তালগাছ লাগানো উচিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে