সরকারি সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য মো. গোলাম ফারুক ও ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন,  গ্রেপ্তার গোলাম ফারুক ২০০০ সালে গাড়ি আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। গাড়ি আমদানির কথা বলে ওই সময় তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতীত এলসি আবেদন করেন। ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেয়ার চাপ দেয়।

পরে ২০০৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের একটি জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন ফারুক। জমিটি ১৯৪৮ সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ হয়। তিনি জালিয়াতির সাহায্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মালিকের ছেলের নামে এই জমির একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন। ২০১০ সালে ওই দলিলমূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের কাছ থেকে গোলাম ফারুক তার স্ত্রীর নামে নামমাত্র মূল্যে জমিটি ক্রয় করে আরেকটি দলিল তৈরি করেন। একই বছর স্ত্রীর কাছ থেকে ওই জমি নিজের নামে দলিল করে নেন তিনি। যার সাফ কবলা দলিল নম্বর-৮৮৮০।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বেসরকারি ব্যাংকে ওই জমির কাগজপত্র বন্ধক দিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রি করার নোটিশ জারি করে। ব্যাংক সরেজমিন গিয়ে দেখতে পায় যে, ওই জমিটি সরকারি সম্পত্তি। পরে ফারুক একটি ভুল সংশোধন দলিল করে আগের বন্ধক রাখা জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে বর্ণিত মামলার বাদীর (মো. জামির আলী) জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করেন। ব্যাংক জমিটিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে প্রতারণার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

এদিকে, সম্প্রতি মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। যেখানে ভুক্তভোগী জামির আলীকে নিজ জমি থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করার চেষ্টা করা হয়। এ উদ্দেশ্যে গোলাম ফারুক ও তার সহযোগী ফিরোজ আল মামুনসহ অন্যান্যরা গত ২৬শে মার্চ ও ৬ই এপ্রিল জামির আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। ওই ঘটনায় ভিকটিম আদালতে একটি নালিশি দরখাস্ত করলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বাড্ডা থানাকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দেন। এরপর এ বিষয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক ও ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছেন। মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্যও দেন তারা।

কমান্ডার মঈন বলেন, গেপ্তার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যা চেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতির অপরাধে রাজউক কর্তৃক একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চারটি ও পাবলিক বাদী হয়ে ৩টিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার ফিরোজ আল মামুন গোলাম ফারুকের সব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী। তিনি উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ বিস্তারে কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী জামির আলী বলেন, আমার উত্তরার ২৭ শতাংশ জমি গ্রেপ্তার ফারুক দখল করার চেষ্টা করছিলেন। তাদের কাছে ওই জমির কোনো দাগ খতিয়ান নেই। এছাড়াও ওই জায়গা বন্ধক দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকা লোন নেন। যা আমার অনুপস্থিতিতে আমার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেননি।

র‌্যাব জানায়, ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রির চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ওই ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে উঠে আসে একটি প্রতারক চক্র মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কর্তৃক অধিগ্রহণ করা।

bddinkal

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে