042212Pic-14

বিডি নীয়ালা নিউজ(৭ই মার্চ১৬)-রংপুর প্রতিবেদনঃ বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানব আবুল হোসেন বাজনদারকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই এবার রংপুরে এমন এক পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা দাবি করছে, তারাও আবুলের মতোই একই রকম রোগের উপসর্গ বয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি তাদের পূর্বপুরুষের শরীরেও এ রকম উপসর্গ ছিল।

পরিবারটির বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহপুর কালসার ডাড়া এলাকায়। কালসার ডাড়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার তাজুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছেলে রুহুল আমিনের হাত-পায়ে গাছের ছোট ছোট শিকড়ের মতো গুটি গজিয়েছে। এ জন্য তাঁরা কোনো কাজকর্মও করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এর আগে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাজুলের বাবা আফাজ উদ্দিন মুন্সি। আক্রান্ত আরেক ভাই বাছেদ আলীর দুই পা এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাবার কাছে শুনেছি, আমার জন্মের দুই মাস পরই হাত ও পায়ের নখগুলো বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে তা গাছের শিকড়ের মতো বের হয়ে আসে। দিন যতই গড়াচ্ছে, নখগুলো ততই বড় হচ্ছে। আমার দুই ছেলে রুবেল মিয়া (১২) ও রুহুল আমিন (১০)। রুবেল সুস্থ    ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও রুহুল আমিন হাত-পায়ে বড় বড় নখ নিয়ে জন্ম নেয়। এখন রুহুল যতই বড় হচ্ছে, শিকড়ের মতো গজানো নখগুলোও বড় হচ্ছে।

আমরা বাবা ও ছেলে অন্যের সাহায্য ছাড়া কখনোই নিজের হাতে খেতে পারি না। ছেলের মা আমাদের দুজনকে খাইয়ে দেন। কখনো কখনো চামচ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করি।’ চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল বলেন, ‘দুই বেলা খাবারই জোটে না, চিকিৎসা করাব কী দিয়ে? ভিক্ষা করে যা পাই, তা দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি।’ জানালেন, রংপুরের বিভিন্ন স্থানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁর হাত ও পা কেটে ফেলতে হবে। তাজুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখন যেভাবে বেঁচে আছি, তাতে বাকি দিনগুলো ভিক্ষা করে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুই বেলা খাবার জোটাতে পারব। কিন্তু হাত-পা কেটে ফেললে ওদের মুখে খাবার দেব কিভাবে?’ এমন পরিস্থিতির জন্য তাজুলের স্ত্রী রুবি বেগম ভাগ্যকে দায়ী করেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সংসারের দুইজন নাম-না-জানা অসুখে ভোগায় মাইনসে মোকও কামোত (কাজে) নিবার চায় না। অসুস্থ শরীলে বাপ-বেটার ভিক্ষার আয়ে কোনোমতে দিন যায়।’ স্বামী ও ছেলের পরিচর্যায় দিনের বেশির ভাগ সময় চলে যায় বলে জানান রুবি বেগম। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাত দুটো কোনো রকম নাড়াচাড়া করতে পারলেও পা দুটোর ওজন অনেক। উঁচু করতে পারি না, খুব কষ্ট হয়। হাতের চেয়ে পা দুটোর অবস্থা খুব খারাপ। খুব জ্বালাপোড়া করে। তীব্র ব্যথায় আমি ও রুহুল আমিন ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। হাত ও পায়ের নখ কাটলেই রক্ত বের হয়ে আসে। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। পরিশ্রম করে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে চাই।’ নিজের ও সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এলাকার সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ সমাজের দানশীল ও বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান তাজুল।

রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তাজুলের পরিবারটি দীর্ঘদিন বিরল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ এলাকায় অনেক বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করলেও পরিবারটির পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। অসহায় ওই পরিবারের সদস্যদের দ্রুত প্রতিবন্ধী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।’ তাজুলের পরিবারের সদস্যদের রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এমন কোনো ঘটনা তাঁর নজরে আসেনি। তবে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে এলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘তারাও (তাজুল ও তাঁর ছেলে) বাজনদারের মতো একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে, নাকি তারা অন্য কোনো রোগে ভুগছে তা না দেখে বা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিসাধীন আবুল বাজনদার বিরল ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত বলে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রোম নামে পরিচিত। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এই রোগ হয়। ১০ বছর ধরে বাজনদার এই রোগে ভুগছেন। তাঁর হাত ও পায়ের আঙুলগুলো গাছের শিকড়ের মতো হয়ে গেছে এবং দিন দিন তা বাড়ছে। তাঁকে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর ডান হাতের পাঁচ আঙুলে একদফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি একই হাতে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে