…………………..মোঃ আবদুল মান্নান

 

জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টানিয়ো গুতেরেসো বোতাম টিপে ২০১৭ সালের শুভ সূচনা করে নুতন বর্ষকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত্রি ১২.০১ মিনিটে এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি জাতীসংঘের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ঐ দিন সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের নিকট থেকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সাফল্যের মধ্য দিয়ে ২০১৬ এর বিদায় হলেও বিফলতার অনেক ঘটনাও মনে রাখার মত।শুরুতেই ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারী মাসের ১৭ তারিখ দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় “উত্থান পর্বে বাংলাদেশ” শিরোনামে উল্লেখ ছিল, দূষ্টচক্র ভেঙ্গে উত্থান শুরু হয়েছে বাংলাদেশের।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেড়েছে সক্ষমতা, বিদেশী বিনিয়োগে দেশে ১০০টিরও বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, যার ৩০ টির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ সব উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চীন ও মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথাও পত্রিকায় বলা হয়েছে। আর এ জন্য দেশে প্রেয়োজন দূর্নীতির লাগাম টেনে ধরা।

বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সংকট কাটাতে এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ কারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিক পরিবর্তন। তাহলে সৃষ্টি হতে পারে নুতন নুতন কর্মসংস্থান, আর তখনই ঘটতে পারে জীবন মানের উন্নয়ন। এ গুলোর সফল বাস্তবায়ন হলে দেশে বিস্ময়কর উন্নয়ন ঘটতে পারে বলে পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভারতের মত দেশকেও পিছনে ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ গণের ধারনা। কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে গত তিন দশকে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে তা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে। এতদসত্ত্বেও উন্নয়ন সূঁচকে এশিয়ার মধ্যে তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। যা পরিকল্পনা কমিশন, ইউ,এন, ডিপির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, ৬ই এপ্রিল ‘২০১৭’ দৈনিক আলোকিত সময় পত্রিকায়। ডব্লিউ ই এফ এর প্রতিবেদনে ‘এশিয়ার বাঘ বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে খবর প্রকাশিত হয় ২৩ এপ্রিল ২০১৭ তে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। খ্যাতিমান ম্যাগাজিন দ্যা-ইকোনমিস্ট এর সর্বসেরা দেশের মধ্যে শীর্ষ চার দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশের নাম।

পত্রিকায় উল্লেখ ছিল ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্রের হার কমে যাওয়ার বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ মনোনয়নের প্রস্তাবনা উঠে আসে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়ায়। যদিও এ রিপোর্টে ফ্রান্সকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষ চারে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স ছাড়াও রয়েছে আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাম। ঐ পত্রিকায় আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ যদি দেশে নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব না করত, ইসলামী উগ্রপন্থিদের আতঙ্ক ছড়ানোর সুযোগ না দিত, তাহলে বাংলাদেশকেই সর্বসেরা দেশ হিসাবে নির্বাচিত করা হত।

লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকাটির চলতি সংখ্যায় “সমীহ জাগানো দেশ” শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় এবার বাংলাদেশকে বিরল এ সম্মানে ভূষিত করার লোভ সামলাতে পারছেনা তারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি আরও অনেক অর্জনের কথাও বলা হয়েছিল এগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর এবং দারিদ্রের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস হওয়া। তবে নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব এবং ইসলাম পন্থিদের মুক্তরাজত্ব মেনে না নিলে তাদের মতে বাংলাদেশই এবার জয়ী হতে পারে বলে দ্যা ইকোমিন্ট ম্যাগাজিনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বড় দিনে “ইকোনমিষ্ট” একটি দেশকে বর্ষ সেরা দেশ হিসেবে বেঁচে নেয় এ সম্মানে ভূষিত করার জন্য চীন ও আমেরিকার মত বিশাল ভূখন্ড কিংবা অর্থনৈতিক শক্তি থাকার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন বছরের ১২ মাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে সাধিত অর্জন অথবা বিশ্বকে উজ্জ্বলতর করেছে এরূপ কর্মকান্ডের দেশকে বেঁচে নেয়া হয়। আর এ সব বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্তি। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত পর্যালোচনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ “মেমোরী আব দ্যা ওয়ার্ল্ড” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও তালিকায় স্থান দেয়ায় জাতির জনকের মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিশ্বে বাংলাদেশের ও বাঙ্গালী জাতির মর্যাদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এ কারণেই।২০১৭ সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো সংবিধানে ১৬ তম সংশোধনী বাতিলের রায় এবং প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ছুটি ও পদত্যাগ। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ করবে সংসদ সংবিধানের এমন সংশোধনী বাতিল করেন আপীল বিভাগ, ক্ষমতাসীনদের বাক্যবানে জর্জরীত হয় বিচার বিভাগ। পাশাপাশি নিন্ম আদালতের বিচারকদের গেজেট প্রকাশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ইস্যুতে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরূত্ব।

এ বিষয় ক্ষমতাসীনদল ও জাতীয়তাবাদী দলের আইনজীবিরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও দেয়। দেশ ছাড়েন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তিনি আর দেশে ফিরেন নি, সিঙ্গাপুর থেকে পাঠান পদত্যাগ পত্র। তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেন। অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়া। আগে দফায় দফায় সময় নিলেও পরবর্তীতে প্রকাশ হয়েছে নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকুরীর শৃংখলা বিধির গেজেট। এ ছাড়াও বছরের মাঝামাঝিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য ইস্যুতেও সরগরম ছিল সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন। যে কারণে ভাস্কর্য সরিয়ে তা পরে এনেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দেয়া হয় এ বছরে।

নভেম্বরের শেষ দিকে বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে ৫৪ সেনা অফিসারসহ ৭৪ জন হত্যা মামলার রায় দেয়া হয়। ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন আদালত। এরপর আগষ্টের শুরুতেই পুরাণ ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যার মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮ আসামীর মধ্যে কেবল ২ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেয় আদালত। সিলেটের শিশু রাজন হত্যার প্রধান আসামী কামরুলসহ ৪ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে হাইকোর্ট। খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে যাবৎজীবন কারাবাসের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের মামলার বছরের শুরুতেই র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ আরিফ হোসেন, এম এম রানা ও কাউন্সেলর নুর হোসেন সহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন নারায়নগঞ্জ আদালত।

এ মামলার আপিলের রায়ে আগের ৪ জন সহ ১৬ জনের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এ ছাড়াও ট্যানারী শিল্প পুরাণ ঢাকা থেকে সাভারে স্থানান্তরিত করার রায় দেয়া হয় ২০১৭ সালেই। আপীল বিভাগের রায়ে হাতীর ঝিল থেকে বিজেএমই ভবন সরাতে হচ্ছে ২০১৮ সালে মার্চের পর। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত চলচিত্রকার তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪১ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

সিলেটে ব্রিটিম হাই কমিশনার এর উপর গ্রেনেড হামলার রায়ে প্রধান আসামী মুফতি হান্নান এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে এ বছরেই। মৃত্যুবরণ করেছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অনেক রাজনৈতিক ও খ্যাতিমান ব্যক্তি এ বছরেই, ডিসেম্বর মাসেই মারাযান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মন্ত্রী ছাইয়েদুল হক। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মারা গেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, সংগীত শিল্পী আবদুল জব্বারসহ অনেকেই, যাদের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে জাতির । এতকিছুর মাঝেও অনাকাঙ্খিত অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, মরহুম মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে আসা ভিন্নধর্মের মানুষের, যা-সত্যিই বেদনাদায়ক। এখানে আসা ১০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মত ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, এ ধরনের মৃত্যু কখনই কাম্য নহে।

২০১৭ সালে নারী নিরাপত্তা দারুনভাবে ব্যহত হয়। বছরটি ছিল নারী ও শিশু নির্যাতনের বছর। তাদের জন্য এ বছরটি সহিংসতা ও আতঙ্কের বছর। অতীতে যেকোন সময়ের চেয়ে এ বছর যৌন হয়রানী ও ধর্ষনের ঘটনা আশংখাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এসিড সন্ত্রাসকেও হার মানিয়েছে। এ বছর শিশুদের নিরাপত্তা ছিল অত্যন্ত নাজুক। পিটিয়ে নৃশংস কায়দায় শিশু হত্যাকান্ডের বেশ কয়েকটি ঘটনা এ বছরে আলোচনার জন্ম দেয়। এ বছর নারী, কিশোরী ও কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল উদ্বেগজনক পর্যায়ে। গণ মাধ্যমে এ বছর আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ধর্ষন ও নারী কন্যা শিশুদের যৌন হয়রানীর ঘটনা ছিল অনেক বেশি।

বাংলাদেশে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৩৩৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয়। যার সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ১৪১ জন। ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় এ বছরে ১৮ জনকে এবং গণধর্ষনের শিকার হয় ১০১ জন নারী ও শিশু। ২০১৬ সালে যার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৭ জন। এ সব ধর্ষনের ঘটনার মধ্যে বনানীর রেইট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া নারী শিক্ষার্থী ধর্ষন এবং টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে তরুনীকে গণধর্ষণ শেষে হত্যা আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞগণ এটাকে সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে মনে করছেন।  ২০১৬ সালে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ছিল ৪৪টি ক্ষতিগ্রস্থ হন ৫০ জন। চলতি বছরে এ ঘটনা ঘটে মাত্র ৩৮টি, ক্ষতিগ্রন্ত হন ৪৭ জন।

এ ঘটনাকেও থামানো যাচ্ছে না। চলতি বছর শিশু নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয় ময়মনসিংহের গোরীপুরে একজন, নরসিংদির শিবপুরে ১ জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। চট্টগ্রামে একসঙ্গে চার নারীকে ধর্ষণ এবং বগুড়ায় ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনাও আলোচনার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ২৮ ডিসেম্বরের প্রকাশিত সংখ্যা ২৭৮ তে যা উল্লেখ করা হয়।  প্রাকৃতিক দূর্যোগের উপর কারো হাত নেই। বছরের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকনাসহ সিলেটের হাওর অঞ্চলে পাহাড়ী ঢল ও আকস্মিক বন্যায় ফসলের ক্ষতি ঐ অঞ্চলের মানুষের দূর্ভোগসহ ধান ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। যে কারণে দেশে চালের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও পরবর্তী সময়ে মারাত্মক বন্যায় দেশে ফসলের ক্ষতিসহ প্রাণ হানীর মত দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে।

আগষ্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর সে দেশের সেনাবাহিনীর সহায়তায় বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের দ্বারা নেমে আসে দূর্ভোগ। ধর্ষণ, খুন, গুম ও জ্বালাও-পোড়াওসহ অমানবিক নির্যাতনের ফলে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে প্রায় ১০ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়। যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাপ্তি, ব্যর্থতা, সাফল্য সবমিলিয়ে ২০১৭ সালকে স্মরণ করে রাখবে দেশবাসী। ভোলা জেলায় নুতন করে গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে, পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শেষের দিকে, রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু, ঢাকায় ফ্লাইওভার উদ্বোধন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ এবং ঢাকা হতে রংপুর এবং ময়মনসিংহে ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালেই।

এ ছাড়াও নৌবাহিনীতে সাব-মেরিন যুক্ত করা হয় এ সালেই। দেশেই তৈরি হচ্ছে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ। যেগুলো উন্নয়নের সাক্ষ্যই বহন করে। ভয়াবহ বন্যার পর দেশে এর কোন ক্ষতির প্রভাব পড়ে নাই যা সরকারের সাফল্যই বলা যায়। তবে বছরের শেষের দিকে চাল ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় সরকার অনেকটা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে এ গুলোর মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে। এরপর ছোট খাটো কিছু ঘটনা ছাড়া রাজনৈতিক কোন সহিংসতা এ বছর হয় নি। যে কারনে সরকারের নির্বিঘেœ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় নি। ছোট-খাটো কোন সহিংসতা ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তেমন বড় কোন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় নি এ বছর।

তবে মাদকের ছোবল থকে দেশকে মুক্ত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালালেও কোন সফলতা আসেনি মাদক নিয়ন্ত্রনে। বরং দিন দিন মাদকের বিস্তার জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনল্ওে মূল হোতারা এর বাইরেই রয়েছে। আর এদের হাত বড় শক্ত। যা-হোক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও কার্যকরী পদক্ষেপে হয়ত এক সময় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে। মাদক ও জঙ্গীবাদ দমনে সফলতা আনতে পারলেই দেশের উন্নয়ন আরও বৃদ্ধি হবে। ক্রীড়া অঙ্গনেও সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোই ২০১৭ সালে ঘটেছে। কাজেই ২০১৭ সাল হল প্রাপ্তি, সফল্য, ও ব্যর্থতার বছর। সবগুলো সাফল্য, প্রাপ্তি ও ব্যর্থতা হিসেব করলে ২০১৭ সালকে সুখের বছর বলে মনে হয় না।

তাই এ বছরের সকল ব্যর্থতার গ্লাণী ভূলে আগামী বছরকে স্বাগত জানাই। ২০১৮ সাল আসুক দেশবাসীর নিকট শুভবার্তা নিয়ে। এ সালেই সকল ব্যর্থতার অবসান ঘটিয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা শপথ নেই; এ কমনাই রইল। সু স্বাগতম ২০১৮ খ্রীষ্টাব্দ। মহান আল্লাহ ২০১৮ সালে দেশবাসীকে সুখ ও শান্তিতে রাখুক।

 

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে