দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি কীভাবে জনগণের ভোট আশা করে এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তারা আসলে নির্বাচনই চায় না’।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি নির্বাচন চায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আসলে নির্বাচনই চায় না। তারা নির্বাচনের অর্থ বোঝে না। তারা ভোট চুরি করতে জানে, কিন্তু জনগণের ভোট নিতে জানে না। জনগণকে ভোট দেওয়ার যে অধিকার, সেই অধিকারে তারা বিশ্বাস করে না। সেটা হলো বাস্তবতা’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ভোটের অধিকারে, আমরা বিশ্বাস করি জনগণ তার ভোট দিয়ে মনের মতো প্রার্থী নির্বাচিত করবে, যে তাদের জন্য কাজ করবে’।

বিএনপি নেতৃত্ব বলে কিছু নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের নেতৃত্ব কোথায়? তাদের নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। একজন এতিমের অর্থ-আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বন্দী। আমরা দয়া করে তাকে তার ঘরে থাকার একটা সুযোগ করে দিয়েছি’।

‘আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং দুর্নীতি, সেই দুর্নীতির তথ্য শুধু আমরা এটা আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে, তারাই সাক্ষী দিয়েছে। সেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সাল বা ২০০৮ সালের দিকে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে, যে আর কোন দিন রাজনীতি করবো না, এই মুচলেকা দিয়েই দেশ থেকে চলে গিয়েছিল খালেদার ছেলে তারেক রহমান। এখন বিদেশে সে থাকে’।

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি কীভাবে জনগণের ভোট প্রত্যাশা করে এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিদেশে থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে দলের চেয়ারপারসন হয়, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করে, সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবার পলাতক, তো সেই দলকে জনগণ কেন ভোট দেবে? সেই দল ভোটের আশা করে কীভাবে?

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিএনপি-জামায়াত অথবা অন্য দলগুলো যারা এই ধরনের সমালোচনা করে থাকে, তাদের প্রতিষ্ঠা কার হাতে? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। জনগণের কাছে ভোট চেয়ে নেওয়ার কোন অভ্যাসই তাদের ছিল না। বরং কেড়ে নেওয়া, চুরি করাই তাদের অভ্যাস ছিল। কাজেই তারা গণতন্ত্রের অর্থও বোঝে না, জনগণের অধিকারের অর্থও তারা বোঝে না। সেই শিক্ষাই তাদের নেই’।  

‘তারা বোঝে সন্ত্রাস, তারা বোঝে দুর্নীতি, তারা বোঝে জঙ্গিবাদ, তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করতে পারে, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে, হাত কাটতে পারে, চোখ তুলতে পারে, মানুষের ঘরবাড়ি দখল করতে পারে, এগুলো তারা পারে। তো সেই সুযোগ পাচ্ছে না বলেই বোধহয় তাদের বেশি আক্ষেপ’।

আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে জানিয়ে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘সেই নির্বাচনে (২০০৮ জাতীয় নির্বাচন) বিপুল ভোটে, আওয়ামী লীগ আমরা মহাজোট করেছিলাম, তাদেরকে নিয়ে আমরা জয় লাভ করি। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে আমরা এ পর্যন্ত সরকারে আছি’।

‘জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই আমরা সরকারে আছি। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যাালোচনা করলে দেখা যাবে একটানা এই ১৩ বছর এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে’।

আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশে অগ্রগতি হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ এর ফলে আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে’।

ক্ষমতা হলো জনগণের সেবার করার সুযোগ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ আমরা সরকারে ছিলাম। বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ করে দেশের জনগণের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছিলাম, সেটা হলো জনগণের সেবক হলো সরকার, ক্ষমতা ভোগ করার বস্তু নয়, ক্ষমতা জনগণের সেবা করার। বাংলাদেশের মানুষ সেটা উপলব্ধি করে’।

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সার্বিকভাবে শুধু আজকেই না, আগামীতে বাংলাদেশ কেমন উন্নত হবে সেই পরিকল্পনাটাও আমি দিয়ে গেলাম। আমাকে এটা চিন্তা করতে হয়, আমারও তো বয়স হয়েছে।  কতদিন আর বাঁচবো। কাজেই এমনভাবে দেশের কাঠামো তৈরি করে যেতে চাই, এমনভাবে পরিকল্পনা করে যেতে চাই- প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যহত রাখতে পারে’।

‘উন্নত জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায়, আর যেন কখনো কারও দ্বারা নিষ্পেশিত হতে না হয়, নির্যানতিত হতে না হয়, সুন্দরভাবে যেন মানুষ বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই আমি করে দিয়ে যেতে চাই। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার সেই অধিকার সুরক্ষিত রেখে আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি’।

আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে টানা তৃতীয়বার মেয়র হিসেবে শপথ নেন নাসিক নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও কাউন্সিলররাও শপথ নেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে