এনামুল হক, সিলেট (বালাগঞ্জ) থেকেঃ বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিব্রতবোধ করছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট জেলার অন্যান্য উপজেলার বিএনপি ঘরানার বর্তমানে দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানরা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও বালাগঞ্জের এই তিন প্রার্থী দলীয় সিন্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২য় দফায় ১১৭টি উপজেলার নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি বালাগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদাল নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বালাগঞ্জ উপজেলাকে ভেঙে ওসমানীনগর উপজেলা ঘোষণা করা হয়।

এতে অবস্থানগতভাবে আবদাল মিয়া ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের সিকন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা হয়ে যান। তবে তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হওয়ায় বালাগঞ্জে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে এবারো তিনি বালাগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তার এমন সিদ্ধান্তে বিএনপির স্থানীয় নেতারা নাখোশ।স্হানীয় ভোটারদের অভিযোগ, বিগত ৫ বছরে আবদাল মিয়া উপজেলার কোন উন্নয়ন করেন নি। তাই ভোট দিতে নারাজ ভোটাররা।

এ দিকে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদাল মিয়ার প্রার্থীতার বিরোধিতা করেন অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুরের সমর্থনকারী ও তার পক্ষের আইনজীবী। মফুরের সমর্থনকারী মিনহাজুল হক মিনহাজ আবদাল মিয়ার প্রার্থিতার বিরোধিতা করে জেলা রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সন্দ্বীপ কুমার সিংহের নিকট একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ সময় মোস্তাকুর রহমান মফুরের সমর্থনকারী ও তার পক্ষের কৌশলী রিটার্নিং অফিসারের নিকট অভিযোগ করে বলেন, আবদাল মিয়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফ নামায় তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস ও চলতি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য হফলনামায় গোপন করেছেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। 

এ বিষয়টি নিয়ে বালাগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা বিএনপির অনেকেই জানিয়েছেন তারা এবার আবদাল মিয়ার পক্ষে নেই। আবদাল মিয়াকে বালাগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিগগিরই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বালাগঞ্জের বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, ইলিয়াস পরিবারের ছায়া থাকার কারণে বিগত নির্বাচনে আবদাল মিয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ওসমানীনগরের বাসিন্দা হয়েও ফের বালাগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু বালাগঞ্জে বিএনপির একাধিক নেতা নির্বাচন করার আগ্রহ দেখালেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে শেষ পর্যন্ত কেউই আর প্রার্থী হননি। এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম শুধু আবদাল মিয়া। তার দলীয় পদ-পদবি থাকারও পর তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সমর্থন না নিয়ে নির্বাচন করছেন। এতেই প্রমাণ হয় যে, আবদাল মিয়া দলীয় স্বার্থে নয়, শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু বালাগঞ্জের বিএনপি তাকে মেনে নেবে না। তাই সময় থাকতে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়াটাই হবে তার জন্য ভালো।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আবদাল মিয়া বলেন, দীর্ঘ ৫ বছরের সাজানো মাঠ। এ কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। যদি দেখি, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে- তাহলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি এখনো তার সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি। এ দিকে, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের ছোট বোন যুব মহিলা নেত্রী সেবু আক্তার মনি প্রার্থী হয়েছেন।

মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, দেশ কিংবা বিদেশের কোনো শাখা কমিটিতে বর্তমানে আমার দলীয় কোনো পদ-পদবি নেই। তাই আমি স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। সে হিসেবে আমার ক্ষেত্রে দলীয় নির্দেশনার কোনো নিয়ম নেই।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় দেখাই হচ্ছে দলের প্রতি অনুগত বিষয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে