aids er tika

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৭ই আগস্ট ২০১৬ ইং)-স্বাস্থ ও চিকিৎসা প্রতিবেদনঃ  আমরা কম্পিউটেশনাল ডিজাইন আর স্ট্রাকচারাল বায়োলজির মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাসের একটি  প্রোটিনের একটা অংশ বানিয়েছি। যেটা আমাদের ‘জার্মলাইন’ (যেগুলো আমাদের শরীরে জন্মের সময় থেকেই থাকে) অ্যান্টিবডিগুলোকে শনাক্ত করে। আর সেগুলোকে এইচআইভি প্রতিরোধ করার মতো করে গড়ে তুলতে পারে। তার ফলে, ওই ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য এবার আমরা আগেভাগেই তৈরি থাকতে পারব

কলকাতায় জন্ম অনিতার। স্কুলজীবনের বেশির ভাগটাই থাকতেন ন্যাশনাল লাইব্রেরি ক্যাম্পাসে। পরে সেখান থেকে চলে যান মহেশতলায়। সেন্ট পলস আর সেন্ট টেরেসা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে জুলজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দিল্লিরই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োইনফর্মেটিক্সে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ শেষ করে পিএইচডি করেন ফ্রান্সের গ্রেনোবল  থেকে। অনিতার প্রথম পোস্ট ডক্টরাল থিসিসটির কাজ চলছে এখন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চলছে এইডস সংক্রান্ত গবেষণার কাজ।     বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশ করে সাড়া জাগানো গবেষণাপত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট উইলিয়াম শিফের নেতৃত্বে ওই গবেষক দলে যে একমাত্র ভারতীয় রয়েছেন, তিনি বাঙালি। অনিতা সরকার। কলকাতার মেয়ে অনিতা এইডসের টিকা আবিষ্কারে সরাসরি অবদান রেখেছেন। তাকে নিয়েই গর্ব বাঙালি পাড়ায়।

অনিতা ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোয়ায় ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট   এইডস। বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই নিশ্চিত মৃত্যু— এই আতঙ্ককে সামনে রেখেই এইডসকে মোকাবিলার জন্য কাজ করে চলেছেন বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা। এইডস এখনো বিশ্বে মহামারী। এর কোনো প্রতিকার বা প্রতিরোধের উপায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো খুঁজে পায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউএন এইডস  পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৩ সালের শেষে বিশ্বে সাড়ে তিন  কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এইডসে। তার মধ্যে শুধু ভারতেই এইডস-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাটা বছর তিনেক আগেই পৌঁছে গেছে ২১ লাখে। এইডস গত দুই-তিন দশক ধরে গোটা বিশ্বের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এবার দেখা মিলল সাফল্যের। বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশ করে সাড়া জাগানো গবেষণাপত্র। যার শিরোনাম-‘এইচআইভি-ওয়ান ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি প্রিকার্সার বি  সেলস রিভিলড বাই জার্মলাইন-টার্গেটিং ইমিউনোজেন’। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট উইলিয়াম শিফের নেতৃত্বে ওই গবেষক দলে যে একমাত্র ভারতীয় রয়েছেন, তিনি বাঙালি। অনিতা সরকার। কলকাতার মেয়ে অনিতা এইডসের টিকা আবিষ্কারে সরাসরি অবদান রেখেছেন। তাকে নিয়েই গর্ব বাঙালি পাড়ায়। অনিতা ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোয়ায় ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট। আগামী বছরের শেষ নাগাদ নতুন এইচআইভি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হতে পারে। স্ক্রিপস গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের গবেষণার অংশ হিসেবে এ কাজটি করা হবে। শুরুতেই এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করতে পারবে না। তবে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। গবেষণা দলের হয়ে এইডসের ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করবে সেটাও প্রকাশ পেয়েছে জার্নালে— ‘শরীরে ভাইরাসের মতো শত্রুরা হামলা চালালে, তাদের রুখতে প্রাকৃতিকভাবেই, শরীরে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বিশেষ বিশেষ ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য বিশেষ বিশেষ অ্যান্টিবডি। যেমন, তলোয়ারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঢাল বা বর্ম লাগে। আর, বুলেট-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে লাগে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। প্রতিরোধের ধরনটা মোটামুটি একই রকম হলেও তার হাতিয়ারটা হয় আলাদা আলাদা। গত ৩০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, খুব অল্পসংখ্যক এইচআইভি-পজিটিভে আক্রান্ত মানুষ এমন বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারেন। এমন অ্যান্টিবডির সংখ্যা ও ভাইরাসের ‘মিউটেশন রেট’-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের দ্রুত পরিবর্তনের ক্ষমতাই এইচআইভি ভাইরাসকে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেবে না। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এইচআইভি-পজিটিভ ভাইরাস রোখার জন্যও আমাদের শরীরে গড়ে ওঠে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিবডি। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এমন একটা টিকা বানাতে, যা দেহে ওই অ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। যার ফলে, সুস্থ মানুষের শরীর ওই মারাত্মক ভাইরাসের হানাদারিকে রুখতে পারে। যা দিয়ে বানানো হচ্ছে এই ওই এইডস রোগীদের মধ্যে খুবই সামান্য একটা অংশের দেহে এইডস ভাইরাসের দ্রুত বংশ-বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর অ্যান্টিবডি, প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে তুলতে পারে। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, যাদের এইডস হয়নি, তাদের শরীরে ওই প্রতিরোধ ব্যবস্থাটাকে কৃত্রিম ভাবে, জোরদার করে তুলতে। আমরা কম্পিউটেশনাল ডিজাইন আর স্ট্রাকচারাল বায়োলজির মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাসের একটি প্রোটিনের একটি অংশ বানিয়েছি। যেটা আমাদের ‘জার্মলাইন’ অ্যান্টিবডিগুলোকে শনাক্ত করে। আর সেগুলোকে এইচআইভি প্রতিরোধ করার মতো করে গড়ে তুলতে পারে। তার ফলে, ওই ভাইরাসের হানাদারি রোখার জন্য আগেভাগেই তৈরি থাকা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের শরীরে কি ওই ‘জার্মলাইন অ্যান্টিবডি’ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে? অনিতার মতে— আমাদের গবেষণায় দেখেছি, সাধারণ, সুস্থ-সবল মানুষের শরীরে এই জার্মলাইন অ্যান্টিবডিগুলো থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণেই। ওই ‘ডিজাইনড প্রোটিন’ আর অ্যান্টিবডিগুলোর গঠন দেখে আমরা নিশ্চিত, সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভির হানাদারি রোখার ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের এই ‘ডিজাইনড প্রোটিন’ আগামী দিনে এইচআইভি রোখার জন্য টিকা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তার সম্ভাবনা যথেষ্টই। এই সম্ভাবনা সত্যিকার অর্থেই আশাব্যঞ্জক। কারণ ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস-এর বিস্তার রোধ করতে চায় জাতিসংঘ। বিশ্বব্যাপী এইডস-এর বিস্তার ২০৩০ সালের মধ্যে রোধে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ। এ ছাড়া আর ২০২০ সালের মধ্যে ৩ কোটি এইচআইভি আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেবে জাতিসংঘ। সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে না। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে নতুন এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বছরে ৫ লাখের নিচে নামিয়ে আনবে। যেখানে ২০১৫ সালে নতুন এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। আর এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর মৃতের সংখ্যা ৫ লাখে নামিয়ে আনবে, যেখানে গত বছর প্রাণ হারিয়েছিল ১১ লাখ। আর ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এইডস ছড়িয়ে পড়ার হার একেবারে বন্ধ করার চেষ্টা করবে তারা।

 

 

bd/p

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে