c7d2d926329896c5b0066d02d9323614-57d2aada4fd0e

বিডি নীয়ালা নিউজ (১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৬)- ডেস্ক রিপোর্টঃবাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠ ও স্বাভাবিক করতে চায় তুরস্ক। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছিল তা দূর করার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও জোরালো করতে চায় দেশটি। দেশটির সরকার ও দূতাবাসের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে এই মনোভাব ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের পর এর সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিল তুরস্ক। এই বিচারের পদ্ধতি ও রায়গুলো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছিল তুর্কি সরকার। তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল পর্যন্ত এই বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছিলেন এবং ২০১২ সালে জামায়াতের দণ্ডিত নেতাদের ‘ধর্মীয় নেতা’ উল্লেখ করে তাদের ফাঁসি কার্যকর না করার জন্য তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সে কথায় হাসিনা সরকার কান না দেওয়ায় তীব্র অসন্তোষও প্রকাশ করে দেশটি। এরপর সরকার পরিবর্তন হয়ে রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন হলেও এই বিচার প্রক্রিয়া ও জামায়াত নেতাদের ব্যাপারে একই রকম মনোভাব দেখায় তার সরকার।

বিশেষ করে গত মে মাসে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার ঘটনায় দেশটির প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত তীব্র এবং তারা একাধিক বিবৃতি দেয়। এরপর নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পর তুর্কি রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজটার্ককে আলোচনার জন্য আংকারায় ডেকে পাঠানো হয়। দেশটির ওই প্রতিক্রিয়াকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হিসেবেই ধরে নিয়েছিল কূটনীতিকমহল।

কিন্তু, এই পড়তি সম্পর্কে নতুন রঙ লাগে এর দুই মাসের মধ্যেই তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় বাংলাদেশ এরদোয়ান সরকারের পাশে দাঁড়ানোয়। ১৫ জুলাই তুরস্কে ওই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর গোটা পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ এবং এরদোগান সরকারকেই সমর্থন জানায়। এ ঘটনায় প্রকৃত বন্ধুত্বের নিদর্শন খুঁজে পেয়ে মনোভাব পাল্টে যায় তুরস্কের। এর এক মাসের মধ্যেই তলব করে নিয়ে যাওয়া নিজ রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজটার্ককে আবারও ঢাকায় দায়িত্বভার দিয়ে পাঠায় দেশটি।

যদিও গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির ঘটনাটিতেও বরাবরের মতো নাখোশ মনোভাব দেখিয়েছে দেশটি, কিন্তু অন্য সময়ের তুলনায় এই প্রতিক্রিয়া ছিল অনেক হালকা।

বরং কূটনীতিকদের মন্তব্য, তলব করে নিয়ে যাওয়া নিজ রাষ্ট্রদূতকে আবারও ঢাকায় দায়িত্বভার দিয়ে পাঠানোই প্রমাণ করে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে স্বাভাবিক ও আরও ঘনিষ্ঠ করতেই আগ্রহী এরদোয়ান সরকার। কূটনীতিকদের মন্তব্য, দেশটির এ নাটকীয় পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন এবং এর ফলে তারা বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা থেকে সরে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো বন্ধু দরকার তুরস্কের। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। এ সম্পর্ক বজায় না থাকার কোনও কারণ নেই। নিজ নিজ স্বার্থে উভয় রাষ্ট্রকেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কূটনীতিতে একটি বা দু’টি ঘটনা না দেখে, দীর্ঘমেয়াদি আচরণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া শ্রেয়।’

লিয়াকত চৌধুরী জেনেভায় তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘বহুবার বাংলাদেশ তুরস্ককে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশের সমর্থন না পেলে অনেক সময় তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। তুরস্ক যদি কোনও বিষয়ে নমনীয় মনোভাবের বদলে শক্ত মনোভাব প্রকাশ করে, তখন বাংলাদেশও তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে এবং এ বিষয়টি আংকারা বোঝে।’

বাংলাদেশে কর্মরত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজটার্ক দীর্ঘ দিন আংকারায় অবস্থানের পর ঢাকায় আসেন। তার ফিরে আসাকে ইতিবাচক মনে করে লিয়াকত চৌধুরী বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে না চাইলে রাষ্ট্রদূত পুনরায় ফেরত আসতেন না।’

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জমির বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আমাদের মধ্যে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।’

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রভাবে তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে মন্তব্য করেছে। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশকে তাদের দরকার এবং সেজন্য তারা বন্ধুত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, জুলাই মাসে অভ্যুত্থান এরপর থেকে বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান তথা তুরস্কের মনোভাবেরও পরিবর্তন দৃশ্যমান ও লক্ষণীয়।

এর আগে এরদোগান এবং ক্ষমতাসীন জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন।

শুধু তাই না, ২০১২ সালে তুরস্কের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছে মানবতাবিরোধী বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।

সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পর তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগান বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দেন এবং গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেবেন।

অবশ্য বাস্তবে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার না করে আলোচনার জন্য আংকারায় ডেকে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশও এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে আংকারা থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে ঢাকায় ডেকে পাঠায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মে মাসে নিজামীর ফাঁসির পর তুরস্কের যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা গিয়েছিল, জুলাইয়ে  ক্যু-এর পর তা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘তুরস্কে ক্যু হওয়ার পর বাংলাদেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় এবং এরদোগান সরকারকে সমর্থন জানায়, যা তার হাতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে। এ অবস্থায় মত বদল করে তুরস্ক তার রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করলে, বাংলাদেশও তার রাষ্ট্রদূতকে আংকারায় ফেরত পাঠায়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় চলে আসেন। তুরস্কে ক্যু’র পর এরদোগানকে সমর্থন করা বাংলাদেশের কূটনীতির একটি বড় সাফল্য ছিল এবং এর ফল দ্রুতই পেয়েছে ঢাকা।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন,‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো এবং বহুপাক্ষিক অনেক বিষয়ে আমরা একে অপরকে সমর্থন করি।’

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেভরিম উজটার্ক ঢাকায় আসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তার দেশের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা সব দেশের সহযোগিতা কামনা করে।

 

বা/ ট্রি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে