fakka badh
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত আলোচিত ফারাক্কা বাঁধ। ছবি : সংগৃহীত

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৪ই  আগস্ট ২০১৬ইং)-ডেস্ক রিপোর্টঃ   ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত আলোচিত ফারাক্কা বাঁধের প্রায় সব গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ দিয়েছে।  কর্মকর্তারা বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে পানি ছেড়ে দেওয়া হলে বিহার রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা বিবিসিকে বলেন, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কার বেশি গেট খোলা থাকে। এবার বিহার প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ফারাক্কার  ১০৯টি গেটের নয়টি বাদে সবই খুলে দেওয়া হবে।

ভারতের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে গত তিনদিনে ৪২ লাখ ৫৩ হাজার কিউসেকের বেশি পানি ছাড়া হয়েছে বাংলাদেশে। এই সময়ে ফরাক্কার ৯৫টি গেট খুলে খোলা ছিল। বন্ধ ছিল মাত্র ১৪টি।

পাঁচদিন ধরে ফারাক্কার  ৯৫টি গেট খোলা রয়েছে। এই গেটগুলো দিয়ে ২২ আগস্ট পানি ছাড়া হয়েছে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৪৬৯ কিউসেক। ২৩ আগস্ট ছাড়া হয়েছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৪৬৯ কিউসেক।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ফারাক্কায় পানি এলেই সেই পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।

এদিকে ভারতের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, ফারাক্কার ১০০টি গেট খুলে দিলে ১১ লাখ কিউসেক পানি সরে যাবে। এতে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। বিহার রাজ্যে গত এক সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফারাক্কা লকগেটের আপস্ট্রিমে পানির লেভেল রয়েছে ৭৮ দশমিক ৫ ফুট এবং ডাউন স্ট্রিমে পানির লেভেল রয়েছে ৭৭ দশমিক ৯৯ ফুট। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি। বাকি পানি বাংলাদেশের অংশে ছাড়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবারও পানির একটা বড় অংশ বাংলাদেশের দিকে ছাড়া হয়। ফলে বাংলাদেশে  ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মুখে পড়তে চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ফারাক্কা গেট দিয়ে বাংলাদেশের অংশে পানি ছাড়া আপাতত বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা বলেন, ফারাক্কায় গেটগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পরামর্শও করা হয়েছে।

বর্ষার মওসুমে ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়াকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন সমীর সিনহা।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফারাক্কা বাঁধের প্রকৌশলী এ কে দাস বলেন, বাঁধে আর কোনো চাপ নেই। অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধ সূত্রের খবর, প্রতিদিন বাঁধে পানি জমলে তা বাংলাদেশের অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে ফারাক্কা বাঁধে পানি ধরে রাখা হবে না বলেও জানা গেছে।

এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের এপারে (পশ্চিমবঙ্গে) পানি ছাড়লে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তবে বাংলাদেশে পানি ছাড়ার বিষয়টি কেন্দ্রের ব্যাপার বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এর বেশি আর মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী।
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র এবং যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেন, বছরের এ সময়টিকে ফারাক্কায় গেটগুলো খোলা থাকার কথা। নতুন করে গেট খুলে দেওর কিছু নেই বলে কর্মকর্তারা মনে করেন।

কর্মকর্তারা আরো বলেন, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্যই ফারাক্কার গেটগুলো তৈরি করেছে ভারত। কিন্তু এখন নদীতে পানি প্রবাহ এমনিতেই বেশি। তাই  গেটগুলো বন্ধ থাকার কথা নয় বলে উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ১১ লাখ কিউসেক পানির প্রবাহ যদি বাংলাদেশের ভেতরে আসে তাহলে বাংলাদেশ অংশে পদ্মায় পানি বাড়বে কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হবে না। যেহেতু এখন ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমছে সেজন্য পদ্মার পানি বাড়লেও সেটি বন্যা পরিস্থিতির তৈরি করবে না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়।

 

 

ntv

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে