ডেস্ক রিপোর্টঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের (বগুড়া-৬) শূন্য আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এ সপ্তাহের শুরুতে দলের হাইকমান্ড থেকে তার কাছে এই প্রস্তাব যায়। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের হাইকমান্ড নির্বাচনে মান্নাকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি ‘না’ই বলে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে মান্না একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় আমি নির্বাচন করতে চাই না, করবো না।

নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে আগ্রহের কথা বলা হয়েছে। তবে দলে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে নাগরিক ঐক্য ‘আলোচনার বিষয়’ বলেই মনে করে না।
একইসঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, এর গ্যারান্টিও চেয়েছেন মান্না। সে ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনো জবাব পায়নি নাগরিক ঐক্য।

মাহমুদুর রহমান মান্নার ঘনিষ্ঠ একনেতা বলছেন, ‘বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রস্তাব দিয়েছে, এটা কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাকি শরিকদের মধ্যে, বিশেষ করে আ স ম আবদুর রব, কাদের সিদ্দিকীর অভিমত জানাও প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো পরিষ্কার না হলে মান্নার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।’

নাগরিক ঐক্যের একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করছেন, বিএনপিতে যোগ দিতে বলায় বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে মান্নার অংশ নেয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। এ ব্যাপারে মান্না বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ওটা থেমে গেছে।’

বগুড়া-৬ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসন বলেই পরিচিত। তিনি ওই আসন থেকে কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কারাবন্দি খালেদার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন এবং বিজয়ী হন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে ফখরুল শপথ না নেওয়ায় স্পিকার আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন।

পরে নির্বাচন কমিশন ওই শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ হবে ২৪ জুন। তার আগে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৭ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ জুন। সে হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর সময় আছে মাত্র ৫ দিন।

আসনটিতে ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির প্রার্থিতার বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে আছেন। আগামী ২০ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রার্থী না হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী দুইজনের নাম আলোচনায় আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো নেতা নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রকে। তবে বিএনপির হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে মূলত ‘রাজনীতি’কে কেন্দ্র করে। সংসদে যাওয়া ৫ জনকে নিয়ন্ত্রণ করা, দলের নির্দেশনা মেনে চলার মতো বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে তিনজনের নাম আলোচনায় এসেছে, তারা হলেন- ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার খবর সঠিক নয়। এছাড়া দল এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটাও সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ আমরা এই সংসদে একদিকে যেমন শপথ নিয়েছি, অন্যদিকে কিন্তু শপথ না নেয়ার বিষয়ও ছিল।’

বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এ সরকার যে রকম নির্বাচন করে, তাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি নির্বাচন করার পক্ষে নই। তবে দল যদি সংসদের সীমিত সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চিন্তা করে আমাকে বগুড়া থেকে উপনির্বাচন করার নির্দেশ দেয়, তাহলে প্রার্থী হবো।’

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য দাবি করেছেন, বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম পছন্দ। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে চান না। সেই ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তিনি নিজেও নির্বাচন করার পক্ষে এই আসন থেকে।

বগুড়ার স্থানীয় নাকি কেন্দ্রীয় কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বগুড়ায় স্থানীয় অনেক প্রার্থী আছেন। তাদের মধ্যে থেকে দেওয়া হতে পারে।

পিবিএ/এএইচ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে