ডেস্ক ‍রিপোর্টঃ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বাড়ি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ধূলশুরা ইউনিয়নের ৪৫ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজ দুপুরে নদী গর্ভে হারিয়ে যায়। এ সময় দুই একর ফসলী জমি এবং নাড়কেল ও আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুরা ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

কিছুতেই থামছে না পদ্মার ভাঙন। প্রতি দিনই বাড়িঘরসহ নতুন নতুন স্থাপনা পদ্মার পেটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার মানুষের কাছে ভয়াবহ আতংকের নাম এখন পদ্মা নদীর ভাঙন।
স্থানীয়রা জানান, মাঝে বেশ কয়েক বছর ভাঙন কিছুটা কমেছিল। তবে এবার হঠাৎ করে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে পদ্মা। এক বছর ধরে বড় ধরনের ভাঙন শুরু হয়েছে। যা গত ১ মাসে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ফসলি জমি ভাংছিল। তখন এত বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এবারের ভাঙনে বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ রাস্তাঘাট ও বড় বড় স্থাপনা সবকিছুই এবার ভেঙেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ হোসেনের সঙ্গে কথা হলো এ বিষয়টি নিয়ে।তিনি বলেন, যে সব এলাকা এরইমধ্যে ভেঙেছে সেসব এলাকার মানুষ যে যার মতো নতুন আশ্রয় খুঁজেছে। ঘর-বাড়ি হারানো এ সব মানুষের বেশির ভাগেরই নতুন আশ্রয়স্থল রাস্তার ধারে উদ্বাস্তু হয়ে দিনানিপাত!
তিনি বলেন, কারণ এরা প্রত্যেকেই গবীব। ঘর দুয়ার হারিয়ে নিঃস্ব। তাই তো নদী থেকে একটু ভেতরের দিকে- কেউ রাস্তায়, কেউবা স্বজন-পরিচিত জনদের ঘরে অাশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমার বাসা একটু দূরেই । এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আমার নিজের পৈতৃক ভিটাও নদী গর্ভে চলে যেতে আর দিন কয়েক সময় লাগবে!
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার সংসদ সদস্য সংগীত শিল্পী মমতাজ । তার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা এখানকার মানুষ এখনো পায়নি।
কয়েক বছর পূর্বে ঢাকার দোহারে পদ্মার ভাঙনে পানকুণ্ডু, ধোয়াইর, বারহা ও আরঙ্গাবাদ এলাকার হাজার পাঁচেক পরিবার তাদের ভিটে-মাটি হারিয়ে এক প্রকার পথে বসেছেন। যাদের হিসেব কেউ রাখেনি ।
এসব মানুষ এখন শুধু গৃহহীনই নন, এ যেন তাদের কাছে জীবনহীন এক রূপকথার অপর নাম। নেই কোনো সাহায্য সহযোগিতা, নেই দেখার কেউ। আর এমনটাই জীবন বলে স্বীকার করছেন এখানকার মানুষ!

কথা হলো এখানকার বাসিন্দা শিশু ইব্রাহীম এর সাথে সে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। সামনে পিএসসি’র পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে কি, জাহাঙ্গীর তো এখন ব্যস্ত বাবা-মার সঙ্গে পরের বাড়িতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েই। ইব্রাহিমের বাবা ঢাকায় একটি প্রেসে কাজ করেন। আর মা গৃহিনী। গত ১ মাস হলো নিজের জন্মস্থান পদ্মায় বিসর্জনের ইতিহাস লিখেছে শিশুটি।
এক রাশ কষ্ট নিয়ে সে জানায়, আপনারা বুঝবেন না নিজের ঘর হারাবার কি যে দুঃখ। একজন মানুষ মরে যাওয়া আর একটি ঘর ভাঙা সমান দুঃখের!

এলাকাবাসী জানায়, ১৯৮৭, ১৯৮৮ সালের দিকে এ এলাকার ভাঙন ইতিহাস। ওই সময়ের ভাঙনে হরিরামপুর থানা প্রায় পুরোটাই নদীর বুকে বিলীন হয়ে যায়। এ তালিকায় ছিল দোহারের আংশিক এলাকাও। এরপর থেকেই প্রতি বছর ভাঙন আসে আর নতুন নতুন মানুষকে নিঃস্ব করে দেয় প্রমত্তা এ নদীটি।

P/B/A/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে