আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের এ ঘোষণা দিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আবে বলেন, আমি চাই না দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমার শারীরিক সমস্যা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াক। নিজের মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে শিনজো আবে বলেন, ‘রাজনীতিতে দুর্বল শারীরিক অবস্থার প্রভাব পড়া উচিত নয় এবং যখন আমি জাপানের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারি না আর তাই আমি পদত্যাগ করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনো ফলাফল তৈরি করতে পারা। সাত বছর এবং আট মাস আমি এই ফল পেতে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু এখন আমি আমার অসুস্থতার কারণে তা করতে পারছি না। আমার চিকিৎসা সেবা নেওয়া প্রয়োজন।’

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আবের সহকারী জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো হয়তো ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আবের এই পদত্যাগের ঘোষণার ফলে তার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই শুরু হতে পারে।

এলডিপির নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে অবশ্য শিনজো আবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

শিনজো আবে রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া কঠোর অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আনায়নের কারণে তার গৃহীত নীতিগুলো ‘আবেনোমিক্স’ নামেও পরিচিত। জাপানের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী এবং সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণে তার সুনাম রয়েছে। 

২০১২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরে জাপানের ইতিহাসে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়েন শিনজো আবে। এর আগেও ২০০৭ সালে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আচমকা তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিবিসি জানিয়েছে, শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যগত একটি জটিল সমস্যায় ভুগছেন শিনজো আবে।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত ১৭ আগস্ট সকালে রাজধানী টোকিওর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন শিনজো আবে। তবে সরকারিভাবে একে প্রধানমন্ত্রীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তখন থেকেই জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ৬৫ বছর বয়সী শিনজো আবের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। দেশটির সরকারি প্রচারমাধ্যম এনএইচকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালনায় যেন সমস্যা তৈরি না হয় তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে