ডেস্ক রিপোর্টঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। উপজেলার গোড়া আমখোলা পাড়া গ্রামে প্রায় ১০ একর জমির উপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ শেষের পথে। এখানে সংযুক্ত হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার কেবলে উচ্চগতি ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যান্ডউইডত। চলতি বছরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী-৪ আসনের (কলাপাড়া-রাঙ্গালি) সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমান তালুকদার আজ বাসস’কে জানান, এই প্রকল্পটি বিএনপির আমলে স্থাপন করার কথা থাকলেও তাদের (বিএনপি) এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় তৎকালীন সময়ে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমান সরকার অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের এর কাজ হাতে নিয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সমুদ্রে পথে আসা সঞ্চালন লাইন গোড়া আমখোলা পাড়ার দ্বিতীয় ল্যান্ডিং স্টেশনে সংযুক্ত হবে। এখানে দেশি-বিদেশি শতাধিক শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৬শ’ ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ল্যান্ডিং স্টেশনের মূল ভবনসহ ফাংসনাল বিল্ডিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সাবমেরিন ক্যাবলের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ডাটা সেন্টারের কাজ শেষ হয়েছে। মূল ভবনের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এখন চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসন, ডরমেটরি, নিরাপত্তা কর্মীদের ব্রাক, বিশ্রামাগার, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ।
১৯টি দেশের টেলিযোগাযোগ সংস্থার সম্মেলনে গঠিত সাউতইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েষ্টার্ন ইউরোপেরে কনসোর্টিয়ামের অধীনে এই সাবমেরিন কেবলে ২০ হাজার কিলোমিটারব্যাপী অত্যাধুনিক ১০০ জি আলোক তরঙ্গের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। জাপানের প্রতিষ্ঠান এনইসি ও ফ্রান্সের অ্যলকার্টেল লুসেন্ট যৌথভাবে এটি নির্মাণে কাজ করছে। কুয়াকাটা সৈয়কত থেকে একটি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ল্যান্ডিং স্টেশন হয়ে মূল কেবল বাংলাদেশে যুক্ত হবে।
এছাড়া মালয়শিয়া, সৌদিআরব, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রিল্কংা, ভারত, মিশর, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বেশ কিছু দেশ এই কেবলে যুক্ত হবে। এ জন্য সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার দীর্ঘ কি:মি: কেবল স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটি চালু হলে দেড়হাজার ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা আর্জন করবে। ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথ’র চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। এছাড়া নতুন রুট হিসাবে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল-শিলং-গৌহাটি-ভুটান পর্যন্ত সংযোগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদার আরো বলেন, এই সাবমেরিন কেবল স্থাপনের ফলে সারা পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপন হবে। যা দেশকে আরো উচ্চ মর্যাদা দান করবে। উপকূলীয় এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় তিনি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে