2016-02-26 09.19.11

নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নে এক পরিবারে ছয়জন প্রতিবন্ধির সন্ধান পাওয়া গেছে। ওদের মধ্যে এক শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, একজন শ্রবণ ও চারজন বাক্ প্রতিবন্ধি। দু:স্থ পরিবারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ওই শিশু ছাড়া অন্য পাঁচ প্রতিবন্ধি দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ত্রাণের একটি কম্বল ছাড়া তাদের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধি ভাতা বা সরকারি কোন দান-অনুদান। ঘটনাটি অজানা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা গ্রামের চিনিরকুঠি সংলগ্ন পোড়াপাড়ার মৃত. মফিজ উদ্দিন ও নুরজাহান বেগম দম্পতির পাঁচ পুত্র ও এক নাতি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। এদের মধ্যে নুর ইসলাম (৫১) শ্রবণ প্রতিবন্ধি, আব্দুর রাজ্জাক (৪৬), আজিজুল ইসলাম (৩৭), শহীদুল ইসলাম (৩০) ও জহুরুল ইসলাম (২৭) বাক্ প্রতিবন্ধি এবং আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র রিফাত (৫) দৃষ্টি প্রতিবন্ধি।
পাঁচ প্রতিবন্ধি সন্তানের মা নুরজাহান ব্গেম বলেন, আমার নয়জন পুত্র সন্তান। দ্বিতীয় পুত্র নুর ইসলাম জন্মের কিছুদিন পর টের পেলাম সে শুনতে পারে না। তার সাথে ইশারায় কথা বলতে হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আমার গর্ভে এলো আব্দুর রাজ্জাক, আজিজুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম ও জহুরুল ইসলাম। পরবর্তীতে টের পেলাম ওরা সবাই শুনতে পারে কিন্তু কথা বলতে পারে না। ওরা চার ভাই বাক্ প্রতিবন্ধি। কথা বলতে না পারায় স্কুলে দিতে পারিনি। তবে তারা নিজ নাম স্বাক্ষর করা শিখেছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় ওদের লালন-পালন করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আমি মোটেও কষ্ট পাইনি। কারণ, তারা সবাই বড় হয়েছে, বিয়ে-সাদি করেছে এবং সন্তানের বাবাও হয়েছে। তাতেই আমি খুশি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার পাঁচ সন্তান প্রতিবন্ধি হলেও প্রতিবন্ধি ভাতা তো দূরের কথা, এ পর্যন্ত সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা তারা পায়নি। এমনকি মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোন পাত্তা পায় না।

এদিকে, প্রতিবন্ধি পাঁচ ভাইয়ের সংসারে এগার জন সন্তান রয়েছে। তবে এদের মধ্যে বাক্ প্রতিবন্ধি আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র রিফাত (৫) দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মেছে। সে ডান চোখে কিছুই দেখতে পায় না। রিফাতের মা ইসরাতুন বলেন, আমার স্বামী যেহেতু প্রতিবন্ধি তাই আমার দুই সন্তানকে নিয়ে ভয়ে ছিলাম। বড় ছেলেটি স্বাভাবিক হলেও ছোট ছেলেটির ডান চোখ জন্ম থেকেই অন্ধ।
শ্রবণ প্রতিবন্ধি নুর ইসলামের স্ত্রী হাসনা বেগম জানান, প্রতিবন্ধি ওই পাঁচ ভাইয়ের সাথে ইশারায় কথা বলতে হয়। তারা খুবই পরিশ্রমী ও বুুদ্ধিমান। তাদের সাথে একই বাড়িতে বসবাস করতে কোন সমস্যা হয় না। একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ইসরাতুন, আজিজুলের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন, শহীদুলের স্ত্রী ইসমত আরা ও জহুরুল ইসলামের স্ত্রী শরীফা বানু।

প্রতিবেশী এনামুল হক জানান, নিজের জমি-জায়গা না থাকায় অন্যের জমিতে কামলা দেন তারা। মজুরী যা পান তা দিয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করছেন। সরকার প্রতিবন্ধিদের জন্য অনেক কিছুই করছে, কিন্তু এক বাড়িতে ছয়জন প্রতিবন্ধি থাকার পরও সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা তারা পায়নি।
প্রতিবন্ধি ওই পাঁচ ভাইয়ের সাথে ইশারায় তাদের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে, তারা বলেন, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে কোন সমস্যা হয় না । পাঁচ বছর পর পর ভোটের সময় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাদের কাছে আসে, মার্কা দেখিয়ে ভোট চায়। তারপর আর আসেন না। কোন খোঁজ-খবরও রাখেন না।

এ ব্যাপারে ওই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার হামিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি স্বীকার করেন যে প্রতিবন্ধিদের প্রাপ্য মুবিধা তিনি দিতে পারেননি। তবে গত শীত মৌসুমে কম্বল দিয়েছিলেন বলে দাবী করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রশীদ মঞ্জুর সাথে। এক বাড়িতে ছয় প্রতিবন্ধির কথা শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রতিবন্ধিদের পরিচয় জেনে নেন ওয়ার্ড মেম্বারের কাছে। তিনি (চেয়ারম্যান) বলেন, তার ইউনিয়নে দেড় হাজার প্রতিবন্ধি অথচ ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ আসে মাত্র ছয় জনের। তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তবে আগামীতে প্রতিবন্ধি ভাতাসহ যে কোন সরকারি অনুদান পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের দেয়া হবে তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে