narikel

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৭ই মার্চ১৬)-কৃষি প্রতিবেদনঃ এ জন্য সেভিন, ইমিটাপ, রিজেন্ট, ডারসবান ইত্যাদি দলীয় যে কোন কীটনাশক দিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করা হলে পোকার আবাসন ধ্বংস হবে। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকা অথবা মাটিতে রস কমে গেলে উভয় ক্ষেত্রেই নারিকেল গাছ অত্যন্ত কষ্ট পায়। এ জন্য বর্ষাকালে গাছ যেন কোন মতেই জলাবদ্ধতার (ডধঃবৎ ষড়ফমরহম) কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, এ জন্য ঠিকমত নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া খরা মৌসুমে নারিকেল বাগানের মাটিতে যেন পরিমিত রস থাকে এ জন্য ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

পোকা মাকড় ও রোগবালাইঃ নারিকেল গাছে যে সব পোকা মাকড়ের উপদ্রব সচারাচর দেখা যায় এগুলোর মধ্যেঃ গন্ডার পোকা, রেড পাম উইভিল, পাতা কাটা পোকা, কালো মাথা শুয়ো পোকা, লাল মাকড় (জবফ সরঃব) ও উই পোকা অন্যতম। এছাড়াও এলাকা বিশেষে রয়েছে ইঁদুর ও কাঠ বিড়ালির আনা-গোনা। এরা নারিকেলের কচি ফুল-ফল খায় কম, নষ্ট করে ৫-৭ গুণ বেশী। গন্ডার পোকা ও উইভিল দমনে অর্গানো ফসফরাস দলীয় যে কোন কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৪-৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করলে তা দমন করা যাবে এবং প্রতি লিটার পানিতে ১-১.৫ গ্রাম ওমাইট/ভার্টিমেক্স নামক মাকড়নাশক ব্যবহার করে রেড মাইট দমন করা যাবে।

রোগ বালাইঃ  নারিকেলে রোগের মধ্যে কুঁড়ি পচা, ফল পচা, ফলঝরা, পাতায় দাগ পড়া, ছোটপাতা, কান্ডে রস ঝরা ও শিকড় পচা রোগ অন্যতম। কুঁড়ি পচা, ফল পচা ও ফল ঝরা রোগ দমনে প্রতি লিটার পানিতে ম্যানকোজেব দলীয় ছত্রাকনাশক দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ২-৩ বার স্প্রে করলে এসব রোগ দমন হবে।

নারিকেল গাছে ফল ঝরা সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানঃ অনেক সময় ছোট অবস্থায় নারিকেল ফল ঝরে পড়ে। কখনও নারিকেলের ভিতরে শাঁস কম হয়, আবার কখনও ডাবে তেমন পানি থাকেনা। এ ধরনের সমস্যা ও উহার সম্ভাব্য সমাধানের প্রধান দিকগুলো নি¤œরূপ :

গাছ লাগানোর ৫-৭ বছর পর থেকেই গাছে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করে। প্রথম ২-৩ বছর গাছে ফুল-ফল ধরা ক্ষমতা অপূর্ণ থাকে। ফলে এ সময় ফুল-ফল বেশী ঝরে পড়া তেমন কোন অস্বাভাবিকতা নয়।

নারিকেল গাছের কাছাকাছি অন্য কোন ফলন্ত নারিকেল গাছ থাকলে প্রয়োজনীয় পরাগ রেনু প্রাপ্তি সম্ভাবনা বেশী থাকে। এ জন্য আশে পাশে ফলন্ত নারিকেল গাছ থাকা ভাল। অনেক সময় কচি ফলের প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রণ নষ্ট (অনড়ৎঃরড়হ) হওয়ার কারণেও নারিকেল গাছে ফল ধরা ব্যাহত হয়।

শুকনা মৌসুমে অনেক দিন পর হঠাৎ বৃষ্টি হলে এবং এ বর্ষন ৫-৭ দিন ধরে চলতে থাকলে ফুলে ফল ধরার জন্য পরাগায়ন সমস্যা হয়। এ সমস্যা দু’ভাবে হতে পারেঃ

প্রথমতঃ পুরুষ ফুলের পরাগরেনু ধুয়ে পড়ে যাওয়া এবং স্ত্রী ফুলের আগায় পরাগ রেনু পড়ে তা পরাগায়ন সুবিধার জন্য যে মধূ বা নেকটার থাকে তা  ধূয়ে গেলে পরাগায়ন ক্ষমতা হারায়।

দ্বিতীয়তঃ দীর্ঘ সময় অনাবৃষ্টি ও শুকনা হাওয়ার পর হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রার অনেক ব্যবধান (দীর্ঘ কাল গরমের পর হঠাৎ ঠান্ডা পড়া) সৃষ্টি হয়, যা ফুল থেকে ফল ধরতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

বেশী সময় ধরে শুকনা ঝড়ো বাতাসের প্রভাবেও নারিকেল গাছের পরাগ রেনু ঝরে পড়ে, মৌমাছির তৎপরতা এ ধরনের প্রতিকুল আবহাওয়ায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যা পরাগায়নে প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।

অনেক সময় দেখা যায় নারিকেল গাছের লাগানো জাতটা নি¤œ মানের, স্ত্রী-পুরুষ উভয় ফুল-ফল ধরার ক্ষমতা কম থাকে, যা জাতগত (এবহবঃরপধষ) কারণে হয়ে থাকে।

ফুল-ফল ধরা কালে নারিকেল গাছে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমনের প্রভাব গাছে ফুল-ফল ঝরার অন্যতম কারণ। এজন্য নারিকেল গাছ যেন সব সময় রোগ বালাই মুক্ত থাকে সে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে।

সর্বোপরি গাছে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব দেখা দিলে, বিশেষ করে পটাশ, বোরণ ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি ও অন্যান্য অনুখাদ্যের ঘাটতি দেখা দিলে বয়ষ্ক গাছে ফল ধরার ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব পড়ে।

এত গুণে গুণান্বিত এ উপকারী বৃক্ষ সম্প্রসারণে সবাই এগিয়ে আসবেন এবং আগে রোপিত গাছকে পরিচর্যা ও নিয়মিত খাবার পরিবেশন করে সুফল ভোগ করুণ এটাই কাম্য।

লেখকঃ এম এনামুল হক

মহাপরিচালক(অবঃ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

সূত্রঃ কৃষিবার্তা

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে