মোঃ আব্দুল মান্নান, বিশেষ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় রংপুর বিভাগীয় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুনঃখননের নামে বরাদ্দকৃত টাকা কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আত্মসাত এর ফন্দিফিকির আটছে উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাসেম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় কিশোরগঞ্জ উপজেলার ২টি পুকুর এবং একটি মুক্ত জলাশয় সংস্কার ও পুনঃখননের জন্য ৩১, লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ পান উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম। তার দেওয়া তথ্য মতে, এসব পুকুর খননের কাজ ২০ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখ শুরু এবং কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৯। যদিও তার দেওয়া তথ্যে কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ৩১ এপ্রিল ২০১৯ উল্লেখ রয়েছে। প্রাক্কলন আনুযায়ী এলাকার তালিকাভুক্ত সুফলভোগী মৎস্যচাষীরাই খনন কাজ করবেন এবং এর সুফল ভোগ করবেন। তথ্যমতে, তিনটি কাজের মধ্যে কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ড, কেশবা আদর্শ গ্রামের পুকুর পুনঃখনন কাজ সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায় প্রায় ২৫/৩০ দিন আগে এই পুকুরটির কিছু খনন কাজ ড্রোজার গাড়ি দিয়ে করা হয়। তালিকাভুক্ত মৎস্যচাষী দুলু মিয়া , পিতা: মফছার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন পুকুর পুনঃখননের আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ ভাগ কাজ উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম তার মনোনিত লোকদ্বারা করিয়েছেন। অন্যান্য উপস্থিত চাষী ছেয়াদ আলী, পিতা: মফছার, মহসেন, পিতা: কলিমুদ্দিনসহ উপস্থিত আরও অনেকে একই কথা বলেন। তারা আরও বলেন, দলপতি নজরুল ইসলাম ও উপজেলা মৎস্য অফিসার দুজনে মিলে পুকুর পুনঃখননের কি দুরভিসন্ধি করেন আমরা জানি না। নজরুলের সাথে কথা বললে সব জানতে পারবেন। পরবর্তীতে দলনেতা নজরুল এর কথা হলে তিনি বলেন, পুকুর পুনঃখননের কাজের কথা বলে উপজেলা মৎস্য অফিসার, আবুল কাশেম আমার নিকট অনেকগুলো ফাঁকা কাগজ ও স্ট্যাম্পে সহি/স্বাক্ষর নিয়েছে এবং আমার নামে সোনালি ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ শাখায় একটি একাউন্ট খুলে একাউন্টের চেক বহির প্রথম চারটি ফাঁকা চেকপাতায় আমার স্বাক্ষর নিয়ে পুুরো চেক বইটি উপজেলা মৎস্য অফিসার নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম স্থানীয় তিনজন প্রভাবশালী ছেলের সাথে হাত মিলিয়ে আমাদেরকে বঞ্চিত করে পুকুর পুনঃখননের নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দকৃত পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছেন। আমরা গরীব হত-দরিদ্র মানুষ, কারো বিরুদ্ধে যাওয়ার বা অভিযোগ দেওয়ার সাহস শক্তি আমাদের নাই। আমরা শুধু চোখ বুঝে সবকিছু সহ্য করছি। যেটুকু বললাম একট্কুু জানলেও আমার সমুহ ক্ষতি হইতে পারে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেমের ২৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ দেওয়া লিখিত তথ্যমতে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কেশবা আদর্শ গ্রামের পুকুর পুনঃখননে মোট ৬৯৯১.৭৩২ ঘন মিটার কাজের জন্য ১৪ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ইতিমধ্যে কাজের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৯ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনও ১৫ ভাগের বেশি হয় নি। যদিও ৬০ ভাগ কাজ করার তথ্য উপজেলা মৎস্য অফিসার লিখিতভাবে জানিয়েছেন। প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার রাজু আহম্মেদের সাথে মোবাইল ফোনে পুকুর পুনঃখননের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, বাকী কাজ না করলে কোন বিল প্রদানের জন্য আমি সুপারিশ করব না। কাজটি কে করবে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান একমাত্র সুফলভোগী মৎস্য চাষীরাই পুকুর পুনঃখননের কাজ করবেন অন্য কেহ নহে। জেলা মৎস্য অফিসার, আশরাফুজ্জামান এর সাথে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান পুকুর পুনঃখননের কাজ তালিকাভুক্ত প্রান্তিক সুফলভোগী মৎস্যচাষীরাই করবে অন্য কারো করার সুযোগ নাই এ ব্যাপারে কোন প্রকার অনিয়ম হলে কাজের বিল বন্ধ থাকবে। সুফলভোগী চাষী নজরুল ইসলামের চেক বহির ফাঁকা চারটি পাতায় স্বাক্ষর ও গোটা চেকবহি উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম তার নিকট থেকে নিয়ে নিজের কাছে রাখার অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে জেলা মৎস্য অফিসার জানান অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে পুকুর পুনঃকননের জন্য অল্প টাকার একটি বিল দেওয়া হয়েছে যাতে মৎস্য চাষীর দলপতি নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। সরাসরি কথা বলার জন্য জেলা মৎস্য অফিসার ও প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে দেখা করার জন্য নীলফামারীতে গেলেও তাদের দেখা মেলেনি।
মৎস্যচাষীদের অভিযোগ উপজেলা মৎস্য অফিসারের দেওয়া তথ্য এবং প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার রাজু আহম্মেদের তথ্য ও জেলা মৎস্য অফিসার, আশরাফুজ্জুামান এর দেওয়া তথ্যে অনুমান হয় পুকুর পুনঃখননের পুরো বিষয়টিতে জনসাধারণকে বোকা বানানোর জন্য তারা সম্মিলিতভাবে ধু¤্রজালের সৃষ্টি করেছে। কাগজে-কলমে পুকুর পুনঃখননের কাজ তালিকাভুক্ত প্রান্তিক সুফলভোগী চাষীদেরকে দেখানো হলেও মূলত কাজটি উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম তার মনোনিত স্থানীয় প্রভাবশালী লোকদের দ্বারাই করাচ্ছেন। এদের মধ্যে ওয়াদুদ নামে একজন মোবাইলে বলেন প্রকল্প অফিস থেকে পুকুর পুনঃখননের কাজের মঞ্জুরি ও বরাদ্দ আনতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে এবং উপজেলা মৎস্য অফিসার ও জেলা মৎস্য অফিসার এবং প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারকে এ খনন কাজের টাকার পার্সেন্টটেঞ্জ দিতে হবে। খরচ অনেক, আমাদের কিছুই থাকবে না। আপনারা কতবার পত্রিকায় প্রকাশ করেন তাতে আমাদের কোন যায় আসে না। ধারনা হয় পুকুুর পুনঃখননের সমস্ত ঘটনা উপজেলা মৎস্য অফিসার আবুল কাশেম, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার রাজু আহম্মেদ ও জেলা মৎস্য অফিসার আশরাফুজ্জামান অবগত থাকলেও কৌশলে না জানার ভান করছেন বলে প্রতীয়মান হয়। স্থানীয় জনসাধারনের দাবি সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
পরবর্তীতে অন্য দুটি পুকুর পুনঃখনন কাজের অনিয়মের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে