রাজধানীর দক্ষিণখানে বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণখানের মোল্লারটেকের এ অ্যান্ড এ ফ্যাশন গার্মেন্টসের সামনে আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। পরে সকাল ১০টার দিকে কসাইবাড়ী-কাঁচকুড়া সড়কের মোল্লারটেক এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

তবে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে সড়কে বসে পড়েন। তিনি শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া শোনেন এবং বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেন। তখন শ্রমিকেরা সড়ক থেকে সরে গিয়ে গার্মেন্টসের নিচে আন্দোলন করতে থাকেন। 

আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অপারেটর আসমা বলেন, ‘গতকাল রোববার আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু বেতন-ভাতা না দিয়ে উল্টো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এক নেতাকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। বেতন-ভাতার দাবিতে এবং আমাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ 

আন্দোলনরত শ্রমিক এবং ওই গার্মেন্টসের কাটিং সেকশনে কর্মরত শাকিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গার্মেন্টসের মালিক আসে নাই। শুধু এমপি এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন। কিন্তু সান্ত্বনা শ্রমিকেরা মানছে না। সান্ত্বনায় আমাদের পেটের ক্ষুধা মেটে না।’ 

শাকিল আরও বলেন, ‘এমপি সাহেব বলেছেন এক সপ্তাহ সময় দিতে। কিন্তু কেউ মানবে না। আবার এক সপ্তাহ পর বেতন পাব, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে সোমবার স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিব হাসান আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মহাসড়কে বসে পড়েন। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রাতে আন্দোলনের বিষয়টি শুনেছি। পরে পুলিশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। আমার মায়েরা সারা দিন পরিশ্রম করে পয়সা পাবে না আর মালিকেরা আরাম-আয়েশে ঘরে বসে থাকবে? এসব আমার আসনে বরদাশত করা হবে না।  

আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে হাবিব হাসান বলেন, ‘যারা গুণ্ডামি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’   

এর আগে গতকাল রোববার বেতনের জন্য সারা দিন গার্মেন্টসটিতে অপেক্ষা করে পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোল্লারটেক উদয় স্কুলের পেছনের ওয়ার্ড ছাত্রলীগের অফিসে কিছু শ্রমিককে ফোনে ঢেকে নিয়ে বেতন দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি বাকি শ্রমিকেরা জানতে পেরে সেখানে গেলে দক্ষিণখান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির চৌধুরী রিও এবং উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রুহুল আবছার আবিবের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। 

এ সময় মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সহসাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিনকে তুলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। পরে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে শ্রমিকনেতা রুহুল আমিনকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করে বিভিন্ন চাপে পড়ে ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। 

অন্যদিকে মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সালেহা ইসলাম সান্ত্বনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব আমাদের মাঝে এসেছিলেন। তিনি বৃহস্পতিবারের মধ্যে ফয়সালার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আমরা আজই ফয়সালার চেষ্টা করব।’ 

ফেডারেশনের নেতার ওপর হামলা প্রসঙ্গে সান্ত্বনা বলেন, ‘হামলার ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করব। সেই সঙ্গে হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ajkerpatrika

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে