ডেস্ক রিপোর্টঃ ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কারখানার কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এ বিষয়ে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির কারখানা বন্ধে ২০১১ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। ছয়জন বিবাদীর প্রতি এ রায় দেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ মার্চ জাতীয় একটি দৈনিকে ‘আদালতের রায় উপেক্ষা; ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্যে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরি থেমে নেই’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনযুক্ত করে হাইকোর্ট হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ আবেদন করা হয়।

ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির কারখানা অবিলম্বে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে যারা এরসঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ছয় বিবাদীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাইকোর্টের রায় পালন না করায় ছয় বিবাদীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যরক্রম নেওয়া হবে না সে মর্মে শোকজ করে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন আদালত। ছয় বিবাদী হলেন, শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কারখানা বন্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। কিন্তু আদালতের সে রায়ের তোয়াক্কা না করে অসাধু চক্র প্রকাশ্যে ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরি করছে। এসব খাদ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার পোলট্রি ও মৎস্য খামারে। মাছ ও মুরগির মাধ্যমে ক্রোমিয়ামসহ ট্যানারির বিষাক্ত বিভিন্ন কেমিক্যাল যায় মানব শরীরে। এর ফলে ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।’

‘সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চাষ করা মাছ ও ফার্মের মুরগির মাংসে ও ডিমে মাত্রাতিরিক্ত ক্যানসারের উপাদান পাওয়া গেছে। বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি খাবার খাওয়ানো হতো এসব মাছ-মুরগিকে। এ ফিডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেশি মিট বোন’ বা পোলট্রি ফিড। আর এই ফিডের ভেতরেই ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগের অন্যতম কারণ ক্রোমিয়ামের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘আগে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য জ্বালিয়ে পোলট্রি ও ফিস ফিড তৈরি করা হতো রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাকে ঘিরে। হাজারীবাগের আশপাশ এবং কামরাঙ্গীরচরে আগে ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে ফিড তৈরির শতাধিক কারখানা ছিল। ’

‘২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর করে নেওয়া হয় সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে। এখানকার চামড়া শিল্পনগরীর একেবারে গাঁ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফিড তৈরির কারখানা। একই সঙ্গে এখানে মশার কয়েলের কাঁচামালও তৈরি করা হয় ট্যানারির বর্জ্য জ্বালিয়ে।’

ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোলট্রি ও ফিস ফিড এবং মশার কয়েল তৈরি মানব শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর আশপাশে দেখা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে গড়ে ওঠা চামড়া শিল্পনগরীর একেবারে উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে ট্যানারির বর্জ্য জ্বালানোর খামার রয়েছে বেশ কয়েকটি। এখানে প্রায় ৪০টির মতো চুলা রয়েছে ট্যানারির বর্জ্য পোড়ানোর জন্য। এখানেই প্রকাশ্যে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় পোলট্রি ফিড, ফিস ফিড ও মশার কয়েলের কাঁচামাল। কারখানাটির মালিকের নাম সুমন।

তিনি বলেন, ‘ট্যানারির বর্জ্যগুলো ট্যানারির মালিকরা তাদের শ্রমিকের মাধ্যমে আমার খামারে ফেলে যায়। পরে আমরা সেগুলো শুঁটকি চুলায় জ্বাল দেই। এগুলো জ্বালানোর পর রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকিয়ে ঝরঝরে হওয়ার পর বস্তায় ভরে সাভারের আশপাশ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।’

P/B/A/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে