মারুফ সরকার : বিশেষ প্রতিনিধি: সুমন বাহিনী(এসবি) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি আতংকের নাম। মাদক ব্যবসা থেকে খুন সব কিছুতেই পারদর্শী এসবি বাহিনী।  আর এই বাহিনীর নাম করন করা হয় বিতর্কিত উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের নামে। মূলত সুমনই এই এসবি বাহিনীর নিয়ন্ত্রক। সুমন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা  জামাত-শিবিরের অন্যতম  অর্থ যোগানদাতা। বর্তমানে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান।  রাজনীতির শুরু আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে।

রাজনীতির শুরু থেকেই মাহমুদ হাসান সুমন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরোধিতা করে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এক সময় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারনের দূরত্ব বাড়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার আপন চাচা আব্দুল ছাত্তারের সাথে। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জের মনোনয়ন দেওয়া হয় মহাজোটের প্রার্থী ফখরুল ইমামকে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বারবার সতর্ক ও চিঠি দেওয়ার পরেও তিনি নির্বাচন থেকে সরে না গিয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু নির্বাচনের কয়েকদিন আগে হাইকোর্ট  নির্দেশ দেয় তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে বহাল থাকায় তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তারপরও তিনি মহাজোটের প্রার্থীকে ঠেকাতে বিএনপির প্রার্থীর সাথে এক হয়ে মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান।  এই বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলা আওয়ামী লীগকে বিষয়টি অবগত করেন।  উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ‘আমাদের এখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা অসহায়। আমাদের এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথা বলার মত কোন যায়গা নাই। কেউ কিছু বললেই এসবি বাহিনীর মাধমে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ে সেখানে এসবি বাহিনী ব্যাপক নির্যাতন চালায়। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়না সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু  এখন আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা আশা করি এই আওয়ামী   নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি একশন নিবেন। অন্যথায় আওয়ামী লীগের সত্যিকারের নেতাকর্মীরা একসময় হারিয়ে যাবে’।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মাহমুদ হাসান সুমন আওয়ামী লীগের আদর্শের বাহিরে বিশাল ক্যাডার বাহিনী  নিয়ন্ত্রণ করেন উক্ত ক্যাডার বাহিনীর নাম দেওয়া হয় সুমন বাহিনী (এসবি)। আওয়ামী লীগের কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে এসবি বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নানানভাবে হয়রানী করেন তিনি।
শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীই নয় এসবি বাহিনীর অত্যাচারে অনেকটা দিশেহারা ঈশ্বরগঞ্জের সাধারণ মানুষ। এটা যেনো একটা আতংকের নাম। সাধারণ মানুষের যায়গা দখল মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি কোন অপরাধই সুমন বাহিনীর বাদ নেই। গত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে উপজেলার আঠারবাড়িতে সুমন বাহিনীর (এসবি) হামলায় নিহত হন নেত্রকোনা জেলা কারাগারের এক জেল কর্মকর্তা।  এ ঘটনায় ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেন।  ঈশ্বরগঞ্জের মাদকের নিয়ন্ত্রণ ও এই এসবি বাহিনীর হাতে। উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আবুল খায়ের এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন মাদকের ব্যবসা। আর এই নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করেন এসবি গ্রুপকে। এসবি বাহিনীর অন্যতম সদস্য এনামুল হকের বিরুদ্ধে উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নে  দাদনের ফাঁদে ফেলে অসহায় বৃদ্ধার বাড়িসহ বসতভিটা জবরদখল করে নেয়। পরে ওই বৃদ্ধা পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া এক স্মারকলিপি দেন। তিনি জানান ওই যুবলীগ নেতা পরিবারের কোনো সদস্যকে না জানিয়ে ছাহেরা খাতুনের ছেলে ইদ্রিস মিয়াকে ৬০ হাজার টাকা দাদন দেন। ওই টাকার সুদ বাবদ ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দাবি করে ইদ্রিস মিয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক এসবি বাহিনীর মাধ্যমে এনামুল হক তার এক নিকটআত্মীয়ের নামে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি দলিল করে নেন। কিন্তু একই দাগে ছাহেরা খাতুনের নামে ৫ শতাংশ জমির ওপর ৪২ হাত লম্বা একটি আধাপাকা ঘর বিদ্যমান রয়েছে। সে ঘরটিও দখল করে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। মূলত সুমন তার পোষা বাহিনীর মাধ্যমে এলাকার রাজনীতির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। আর এসবি বাহিনীগঠন করা হয় সাবেক শিবির-ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে। এখানে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীর যায়গা হয়না। এসবি বাহিনীর কাছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা অসহায়। আর এই  অসহায়ত্বটা আরো ব্যাপক আকার ধারন করে যখন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে মাহমুদ হাসান সুমনকে নৌকার প্রতীক দেওয়া হয়।  যেখানে মাহমুদ হাসান সুমন রাজনীতির  শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে আসছে।  সর্বশেষ গত ৩০শে ডিসেম্বর-২০১৮ তেও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সিংহ মার্কায় নির্বাচন করেছে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে মাহমুদ হাসান সুমনকে নৌকার প্রতীক দেওয়া ঈশ্বরগঞ্জের তৃণমূলের  আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। সুমন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তার নিজেস্ব ক্যাডার বাহিনী এসবি’র মাধ্যমে নানারকম চল-চাতুরী করে নির্বাচন জয়লাভ করেন। মাহমুদ হাসান সুমন জামায়াত ইসলামের অন্যতম অর্থযোগানদাতা হিসাবে ঈশ্বরগঞ্জের সকলের জানা। জামায়াত ইসলামের মাসিক চাঁদা সুমন নিয়মিত দিলেও নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবী করেন।

গত কয়েকমাস আগে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখাবে মাহমুদ হাসান সুমনের ভাই আবুল খায়েরকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদ্য বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসকে বড় অংকের টাকা দিয়ে সুমন তার ভাইকে সভাপতি বানিয়ে উপজেলা যুবলীগের কমিটি ভাগিয়ে আনেন। যেখানে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সত্যিকারের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে যুবদল ও জামায়াত কর্মীদের নিয়ে যুবলীগ কমিটি গঠন করা হয়।  কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মাথায় ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযান চালিয়ে যুবলীগ সভাপতি আবুল খায়েরের অফিস থেকে জুয়া খেলার সময় মাদক সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার কর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে