059cb31f0cd0d62d2a338bc2ffc6fee7-57d11e7446eb1

বিডি নীয়ালা নিউজ (০৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৬)- ডেস্ক রিপোর্টঃ জঙ্গি অর্থায়নে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)-এর বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এ তথ্য জানিয়েছেন।

শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এপিজির বার্ষিক সভায় বাংলাদেশকে নিয়ে তৃতীয় পর্বের চূড়ান্ত যে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের নেওয়া ভূমিকাকে সন্তোষজনক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি) কর্তৃক ৩য় পর্বের মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম এপিজি ও এর সদস্য ৪১টি রাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’ তিনি বলেন, `ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপভুক্ত (আইসিআরজি) প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা কেটে গেছে।’

উল্লেখ্য, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান যুক্তরাষ্ট্রে চলমান এপিজির বার্ষিক সভায় যোগ দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো শহরে এপিজি বার্ষিক সভায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪১টি দেশের মানি লন্ডারিং রেটিং দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ঝুঁকিতে পড়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে। প্রতিবেদনে  উল্লেখ করা হয়েছে, ১১টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে তিনটিতে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। এজন্য রিজার্ভ চুরি ও গুলশান হামলায় ঘটনার পর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপ (আইসিআরজে) প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো শহরে এপিজি’র বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু গুলশান হামলার পর এপিজির বার্ষিক সভাটি ২ মাস পেছানো হয়। ঢাকার পরিবর্তে ভেন্যু করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

অবশ্য ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন খতিয়ে  দেখে এপিজি যে খসড়া মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, তাতে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ তখন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘এপিজি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ থাকার সম্ভাবনা  বেশি। যদিও ঢাকায় এপিজির বার্ষিক সভাটি বাতিল হওয়ায় কিছুটা অনিশ্চয়তা  দেখা দেয়।

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে এপিজির ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। তখন অর্থ পাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এপিজি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে টানা ১৬টি বৈঠক করে বিএফআইইউ।

জানা গেছে, জঙ্গি অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং যে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন বন্ধে প্রতিবছর এপিজির বার্ষিক সভা করা হয়ে থাকে। এবারের সভায় ৪১টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, ৮টি দেশ এবং ২৮টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এই সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিও ছিল।

উল্লেখ্য, এপিজি হচ্ছে ‘অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন’ বিষয়ে মানদণ্ড নির্ধারণকারী এশিয়া অঞ্চলের সংস্থা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪১টি দেশ এর সদস্য। এপিজি প্রতিনিধিদল সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করে থাকে। ২০০৩ সালে বাংলাদেশকে সংস্থাটি প্রথম মূল্যায়ন করে। এরপর বাংলাদেশ নিয়ে ২০০৮ সালে এ ধরনের মূল্যায়ন করা হয়েছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে খুব বেশি সফলতা দেখাতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশকে কালো তালিকার আগের ধাপ ‘ধূসর’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তী নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর সেখান থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের অক্টোবরে মূল্যায়ন করে গেছে এপিজি। ২০১৪ সালে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইসিআরজি প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে এফএটিএফ পূর্ণভাবে বাস্তবায়নকারী দেশের তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতও এফএটিএফভুক্ত দেশ।  প্রচলিত সাধারণ নিয়মে বিশ্বের কোনও দেশ আইসিআরজি প্রক্রিয়াভুক্ত থাকলে আন্তর্জাতিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেই দেশটির এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেওয়া ব্যবস্থা পরিবীক্ষণের জন্য এপিজির ১৯তম বার্ষিক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম এপিজি ও এর সদস্য ৪১টি রাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রদত্ত রেটিং অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপভুক্ত (আইসিআরজি) প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা আর নেই।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেওয়া ব্যবস্থা পরিবীক্ষণের জন্য এপিজির ১৯তম বার্ষিক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম এপিজি ও এর সদস্য ৪১টি রাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রদত্ত রেটিং অনুযায়ী  আইসিআরজি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা আর নেই।

সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অ্যাসেসমেন্ট টিম কর্তৃক প্রস্তাবিত রেটিংগুলোর মধ্যে দুটি ইমিডিয়েট আউটকামের (আইও) রেটিংয়ে উন্নত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়েকটি সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশের চারটি রেটিং কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা সভায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এর ফলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ নরওয়ে ও শ্রীলঙ্কা থেকে ভালো অবস্থানে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ থেকেও ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এতে সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূলে বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে।

 

বা/ ট্রি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে