SHYLEET

বিডি নীয়ালা নিউজ(৩০ই  আগস্ট ২০১৬ইং) গোলাপগঞ্জ (সিলেট)প্রতিনিধি আজিজ খানঃ  : সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র গোলাপগঞ্জের চাঞ্চল্যকর খালেদুজ্জামান খালেদ হত্যার মামলায় ৩৮৭/৩৬৪/২০১/৩৪ ধারা প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান আসামি কবিরসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাদেরকে আরও ১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটুয়ারী এই রায় দেন। রায়ে মামলার ৮ জন আসামির মধ্যে খালাস পেয়েছেন ৫ জন। রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- প্রধান আসামি হুমায়ুন কবির ওরফে কবির(২৫), মুকিত আল মাহমুদ( ২২), ফাহিম আহমদ(২৫)। রায়ে খালাস পেয়েছেন- কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন(৫০), বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর পুত্র গৌছ উদ্দিন(৫০),কবিরের মা রিনা বেগম(৪৫), বোন লাকি বেগম(২০) ও অপর বোন ফারজানা ডলি(১৯)।

রায় উপলক্ষে আদালত পাড়ায় কড়া নিরাপত্তায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলায় গ্রেপ্তার ৫ সহ জামিনে থাকা আরো ৩ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় খালেদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেন খালেদের আতœীয় স্বজনসহ খালেদের সহপাঠীরা। বেলা সোয়া ১টার দিকে রায় দেন বিচারক। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্র পক্ষের এপিপি এডভোকেট জসিম উদ্দিন জানান, রায়টি প্রত্যাশিত হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। এ সময় উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খালেদের বাবা ছালেহ আহমদ ছল্লুছ । খালেদের বাবা বলেন, আমি এই রায়ে খুশি নই। আশা ছিল খালেদের খুনিদের ফাঁসি হবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আশা করি উচ্চ আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে একই বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন ১৭ আগস্ট, রায় কাগজপত্র প্রস্তত না থাকায় রায়ের পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয় ৩০ আগস্ট । হত্যাকান্ডের বিচার শুরুর পর ১৩ কার্যদিবসে ঘোষিত হলো গোলাপগঞ্জের আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়।

উল্লেখ যে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের নিমাদল পশ্চিমপাড়া গ্রামের ছালেহ আহমদ ছল্লুছ মিয়ার পুত্র সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র খালেদুজ্জামান খালেদ(২০) কে ২০১৪ সালে ২১ জুলাই বিয়ানীবাজার উপজেলার রামধা উত্তর চন্দগ্রামের সাইব উদ্দিনের পুত্র হুমায়ুন কবির (কবির) আমন্ত্রণ জানিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে খালেদকে আটক রেখে ইফতারের পুর্ব মুহূর্তে অহেতুক তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে কবির ও তার বন্ধু গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী গ্রামের আব্দুস সত্তারের পুত্র ফাহিম আহমদ(২৫) সহ ক’জন বন্ধু মিলে মারধর করে নাক-মুখ কস্টেপ দিয়ে মুড়িয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে তারা ইফতার শেষে তারাবির নামাজ চলাকালীন সময়ে খালেদের লাশ কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেয়। চার দিন পর ২৫ জুলাই ফেঞ্চুগঞ্জের কাছে খালেদের লাশ কুশিয়ারা নদীতে ভেসে উঠলে আত্মীয়-ন্বজনরা সেখানে গিয়ে তার পরিচয় সনাক্ত করেন। এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানায় খালেদের বাবা ছালেহ আহমদ ছল্লুছ ঐদিনই কবির, কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন, ঐ এলাকার সাবেক মেম্বার গৌছ উদ্দিন, তাদের নিকটাত্মীয় মুকিত আল-মামুন, শিপলুসহ ৫/৬ জনকে আসামী দিয়ে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ আসামী ধরতে ব্যাপক অভিযান চালায়। পুলিশের তাড়া খেয়ে এক পর্যায়ে কবির ও তার পিতা আদালতে আত্মসমর্পন করলে কবির নিজে খুন করার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে কবিরের সহযোগী ফাহিমকে পুলিশ আটক করলে ফাহিমও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৭ মাস পর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জসীট প্রদান করে।

চার্জসীট ভূক্ত অভিযুক্তরা হলেন বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর চন্দগ্রামের সাইব উদ্দিনের পুত্র হুমায়ুন কবির(২৫), মৃত বশারত আলী পুত্র কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন(৫০), গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুস সত্তারের পুত্র ফাহিম আহমদ(২৫), জকিগঞ্জ উপজেলার বিলেরবন গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র মুকিত আল-মাহমুদ(২২), বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর পুত্র গৌছ উদ্দিন(৫০), মামলার ১নং আসামী কবিরের মা রিনা বেগম(৪৫), বোন লাকি বেগম(২০) ও অপর বোন ফারজানা ডলি(১৯)। অন্যান্যরা জামিনে মুক্ত থাকলেও কবির, ফাহিম, কবিরের পিতা সাইব উদ্দিন ও তার এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য গৌছ উদ্দিন কারাগারে ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে