bangladesh-passport-chhobimela

ইলিয়াছ হোসাইন, গাজীপুর : টাকা না দিলে পাসপোর্ট আসবে না। ঢাকার আগারগাঁও থেকে আসতে অনেক সময় লাগবে। আর টাকা দিলে সময়মতই পেয়ে যাবেন। এ কথা গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের দালাল বীনা রানীর। গতকাল বিকেলে গাজীপুর আদালত ভবন সংলগ্ন ট্যাংকির পাড়া এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সামনে পাওয়া যায় তাকে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সহজে মানুষের হাতে পৌছে দিতে চালু হয় এই আঞ্চলিক অফিস। হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য সরকারের এই আয়োজন হলেও ফল আসছে ঠিক উল্টো। সরেজমিন দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসে কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল গেটের ভেতরে রয়েছেন। তাদের সামনেই চলছে অবৈধ লেনদেন। লাইন ধরে দাঁড়ানো লোকগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দালালরা। ফরম পূরণ থেকে জমা দেয়া ও পাসপোর্ট উঠানো তাদের কাজ। লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তি পাসপোর্ট নিয়ে জমা দিতে গেলে এতে ভুল আছে বলে ফিরিয়ে দেন কর্মকর্তা। যাওয়ার সময় বীনা রানী ডেকে বলেন টাকা দেন সব ঠিক করে দিব। প্রতিবেদক একটি পাসপোর্ট করার কথা বলেন। অকপটে বলে ফেলেন, একটি পাসপোর্ট জরুরিভাবে তিন দিনের মধ্যে করতে হলে ৯ হাজার টাকা লাগবে (নির্ধারিত টাকা ৬ হাজার)। পুলিশ ভেরিফিকেশন সহ সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকার মত খরচ হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা কেবল দালালদের হাত থেকেই টাকা নেন। ধরা পড়ার ভয়ে কোন প্রার্থীর কাছ থেকে হাত নেন না। পাসপোর্ট অফিসের একটু সামনে রাস্তার পাশে একটি চা দোকান। 8 ১টি ব্যাঞ্চে বসে কেবল দালালরা পাসপোর্টের কাজ করেছেন। অন্য ব্যাঞ্চে বসে আছেন মামুন মিয়া। ডাক নাম হাজারি মামুন। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। মামুন মিয়ার পাশে বসে চা সিগারেটে ব্যস্ত বিদ্যুত নামে এক ভদ্রলোক। স্থানীয় নীলের পাড়া গ্রামে বাড়ি দাবি করে বিদ্যুত বলেন, ঘুষ না দিলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। আগে চালান জমা দেন। তার পর সিস্টেম করে পাসপোর্ট বের করে দেই।

বিদ্যুত আরো জানান, একটি জরুরি পাসপোর্ট পেতে ৬ হাজার ১শ’ টাকার চালান ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এরপর পাসপোর্ট অফিসে নির্ধারিত চ্যানেলে ১ হাজার টাকা দেয়া লাগে। ওই টাকা না দিলে ঠিকানা ভুল লিখে ফরম ফেলে দেয়া হয়। অফিস খরচ ছাড়া পুলিশ ভ্যারিফিকেশন করতে নির্ধারিত ১ হাজার’ টাকা লাগে। ওই টাকা দিলে পুলিশ আর তদন্তের জন্য বাড়ি যাবে না। বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় বাড়ি হোক না কেন পুলিশকে ১হাজার টাকা দিলেই চলবে। ঠিকানা তখন মুখ্য বিষয় হবে না। পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।

বিদ্যুত মিয়া প্রকাশ্যেই বলেন, এগুলো ছাড়া পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ, স্থানীয় মাস্তানদের ম্যানেজ করতে হয়। পাশের দোকানের সামনে বেঞ্চে পাসপোর্ট হাতে বসে ছিলেন তরিক নামে ২৩/২৪ বছর বয়সী এক যুবক ও তার এক নিকটাত্মীয়। পাসপোর্ট করতে কত খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তরিক বলেন, সাড়ে ৩ হাজার টাকা সরকাররি চালান হলেও সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের কয়েকগজ সামনে রাস্তার দক্ষিণ পাশের এক দোকানি জানালেন, পাসপোর্ট অফিসে কম করে হলেও ২৫/৩০ জনের একটি দালাল চক্র রয়েছেন।

এ সকল কথা বলতে চাইলে গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্টর এক কর্মি জানান, স্যার ডি সি অফিসে মিটিং এ আছেন। এই তথ্য দিয়ে অন্যরুমে চলে যান। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত গাজীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ১ হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের খবর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ঠিকানা যাচাই ছাড়া কোন পাসপোর্ট দেয়া হয় না। ঘুষ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। যদিও একাধিক পাসপোর্ট গ্রহনকারীরা জানান, ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত যে কোন পুলিশ অফিসারকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ঘুষ না দিয়ে তারা তাদের পাসপোর্ট হাতে পায়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে