ডেস্ক রিপোর্টঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন।

রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলই ভালো হবে বলে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। এদিন দুপুর ১২টার দিকে আবদুল্লাহ আল হারুনের হাতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন তুলে দেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী। এর পর আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, উনারা যেটি পেয়েছেন, নতুন কোনো সিরিয়াস উপসর্গ যোগ হওয়া, এটি হয়নি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (গেঁটে বাত) রয়েছে। সে কারণে দুই হাত ও পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। সে জন্য তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে জানান বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক।

তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড উনাকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে এসেছেন। এর পরও যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন, তা হলে মেডিকেল বোর্ড তাকে এমন একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন, যেখানে সব ডিসিপ্লিনের চিকিৎসা দেয়া হয়। এর আগে শনিবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। প্রতিবেদনের বিষয়ে আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, আমরা গতকাল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। আজ সকাল ১০টা থেকে বোর্ডে পাঁচ সদস্য বসে দেড় ঘণ্টা পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছি।

বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের এ অধ্যাপক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কী কী করণীয় তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার চিকিৎসায় অনেক কিছুই করণীয় আছে। কোথায় চিকিৎসা হওয়া দরকার সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া আছে। পাশাপাশি রোগের বর্ণনাও রয়েছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছি। আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, বোর্ডের চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রতিবেদন সঠিক সময়ে আমার হাতে দিয়েছেন। প্রতিবেদনটি আজই কারা অধিদফতরে পাঠিয়ে দেব।

এদিকে সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ড দিয়ে খালেদা জিয়ার উপযুক্ত ও সঠিক চিকিৎসা হবে না বলে মনে করছে বিএনপি। রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মনে করি না যে সরকারদলীয় সমর্থিত চিকিৎসকদের দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎসা হবে। এটি আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী (ইন্টারনাল মেডিসিন), অধ্যাপক হারিসুল হক (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী (অর্থোপেডিক সার্জারি), সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী (চক্ষু) ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে সরকার। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাজধানীর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানায়।

এর পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

এরই মধ্যে একবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়ে বিশেষায়িত বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বোর্ডের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, শারীরিক পরীক্ষা করতে গত ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়।

J/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে