ডেস্ক রিপোর্টঃ লোহার পেরেকের পরিবর্তে কুষ্টিয়ার বেশ কিছু রেল সেতুতে দেখা গেছে বাঁশের ব্যবহার। সেতুর ওপরে বেশ কিছু লোটার বোল্ট না থাকায় বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের গোজ। সেই সাথে রয়েছে সাইকেল ও মোটর সাইকেলের টায়ারের অংশ।

শতবর্ষের বেশি এসব রেল সেতুতে কাঠের স্লিপার পরিবর্তন করা হয়। তবে স্লিপার যাতে উঠে না যায় সেজন্য পেরেক দিয়ে এসব বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর সারাদেশে রেল সেতুতে বাঁশের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

রেল সূত্র জানায়, ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ সরকার দর্শনা হতে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করেন এবং এরপর পর্যায় ক্রমে সংস্কার হয়। বর্তমানে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে রেলযোগে রাজশাহী-ঢাকা-রাজবাড়ী-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল করছে।

১৮৯৭ সালে দর্শনা-পোড়াদহ সেকশনটি সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯০৯ সালে পোড়াদহ-ভেড়ামারা এবং ১৯১৫ সালে ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী সেকশনগুলোকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ-হালসা রেলওয়ে ষ্টেশনের মধ্যবর্তী কাটদহচর এলাকায় দেখা একটি রেল সেতুতে (নম্বর ১৯১) সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতুর কাঠের স্লিপারগুলো বেশ পুরাতন হয়ে গছে। সেগুলো যাতে ট্রেন চলাচল করার সময় পানিতে পড়ে না যায় এজন্য বাঁশের বাতা এবং বাঁশের গোজ দিয়ে আটকানো।

এ সেতুটি তৈরি করা হয় ১৮৯৭ সালে। আপ এবং ডাউন মিলিয়ে সেতুটির উপর দিকে প্রায় ২৫টি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও মালবাহী গাড়ী চলাচল করে। দর্শনা-পোড়াদহ রুটের সকল ট্রেন ও মালবাহী গাড়ী চলে এই সেতুর উপর দিয়েই।

তার দুই কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরো দুইটি সেতু। সেগুলোর অবস্থাও একই রকম। যেন বাঁশেরই ‘উত্তম’ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেতুর সাথে রেল লাইনের আটকানো ক্লিপ বেশ কিছু স্থানে নেই। লোহা দিয়ে আটকানোর কথা থাকলেও মাঝে মাঝে বাঁশ দিয়ে আটকানো হয়েছে।

১৯২ এর সেতুটি অবস্থা কিছুটা ভালো। কয়েকদিন আগেই পরিবর্তন করা হয়েছে কিছু স্লিপার। তবে সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের গোজ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী বলেন, সেতুটির কাঠগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এই কাঠগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আর অনেক স্থানে পিন না থাকায় ট্রেন গেলে রেল সরে যায়। পিন কম থাকার কারণে কোন রকম চলার জন্য লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে পিন তৈরি করে স্লিপার আটকে দিয়েছে।

এক কিলোমিটার উত্তরে কামারডাঙ্গা (১৯৪) রেল সেতুতেও দেখা গেছে বাঁশের ব্যবহার। সেই সাথে কিছু কিছু স্থানে নেই কোন ক্লিপ।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, রেলগাড়ী এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় যাতে স্লিপার উঠে বা সরে না যায় এজন্য বাঁশ দিয়ে রেখেছে। নাট না থাকায় বাঁশের গোজ ব্যবহার করেছে।

তিনি আরো বলেন, যারা এর দায়িত্বে আছেন তারা নাট না দিয়ে বাঁশের গোজ দিয়েছে। বাপের জন্মে রেল সেতুতে বাঁশ দিয়েছে তা কোন দিন দেখিনি।

এছাড়াও বেশ কিছু রেল লাইনের ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান না থাকায় আতঙ্কে থাকে স্থানীয় যানবাহনে চলাচলরত যাত্রী ও চালকরা।

স্থানীয় পাখি ভ্যানের যাত্রী শায়েদা খাতুন বলেন, রেলের গেট না থাকায় লাইন পার হতে ভয় লাগে। এই ভয় নিয়েই প্রতিনিয়ত রেল পার হতে হয়।

প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে রেল সেতু পার হওয়া ইয়ার আলী জানান, সেতুটির বেশ কিছু স্লিপার নড়বড়ে। মাঝে মধ্যেই পরিবর্তন করে। তবে কী যে করে বলতে পারবো না। লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে গেছে।

রেল সেতু দিয়ে হেঁটে আসা স্কুলছাত্র মিরাজুল ইসলাম জানান, আর কোন রাস্তা না থাকায় আমি এই রেল ব্রিজের উপর দিয়েই স্কুলে যাই। যদি রেল চলে আসে তাহলে পাশের লাইনে ঝাঁপ দেবো।

তবে স্থানীয় রেল সেতুগুলো অনেক পুরাতন হলেও এখনো অনেকটা ভালো দাবি করে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের সহকারী ষ্টেশন মাস্টার নাজমুল হাসান জানান, এই অঞ্চলের আজ অবধি কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি।

পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের ষ্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম জানান, রেল চলার সময় জাম্পিংয়ে যাতে ক্লিপার সরে না যায় বা নড়ে না যায় এজন্য বাঁশের বাতা বাধা হয়েছে।

নাটের পরিবর্তে বাঁশের গোজ স্থায়ী না হলেও এটি অতিরিক্ত সতর্কতা বলে জানিয়েছেন ষ্টেশন মাস্টার শরিফুল।

পিবিএ/এএইচ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে