balckmoney

বিডি নীয়ালা নিউজ(৬ই এপ্রিল১৬)-আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনঃ  ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই মোদি সরকারের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল কালো টাকা৷ বিদেশি ব্যাংক ও বিদেশের নানা সংস্থায় জমা থাকা দেশের বহু বিত্তশালীর বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফেরত আনতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং অরুণ জেটলির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রণালয়।

গোপন আয় সম্পর্কে আয়কর বিভাগকে জানানোর জন্যও খোলা আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে একাধিকবার৷ এবার সেই ইস্যুতেই নতুন করে ইন্ধন জোগাল পানামা পেপারস। সাংবাদিকদের কনসর্টিয়াম যে দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ৫ শতাধিক ভারতীয়ের নাম রয়েছে৷ আর সেই তালিকায় রয়েছে অমিতাভ বচ্চনের মতো হেভিওয়েট নামও৷ রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বোফর্স নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিল গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অমিতাভ বচ্চনের নাম৷ কিন্তু এলাহাবাদের সাংসদ হিসাবে একটি মেয়াদ কাটানোর পর রাজনীতি থেকে দূরেই থেকেছেন বিগ বি৷ তেমন বড় কোন আর্থিক বিতর্কেও তাঁর নাম জড়ায়নি৷ কিন্তু এবার দেশের বাইরে টাকা বিনিয়োগ করার প্রশ্নে তাঁর নাম জড়াল৷ নাম জড়িয়েছে তাঁর পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাইয়েরও।

পানামা লিক থেকে জানা গেছে অমিতাভ বাহামাস ও ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডে চারটি শিপিং ফার্মের ডিরেক্টর৷ তাঁর পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়াও ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডের একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন এবং পরে শেয়ার হোল্ডার হিসাবেও ছিলেন৷ সাধারণভাবে সংস্থার মোট মালিকানার এক শতাংশের বেশি অংশিদারিত্ব থাকলেই সেই শেয়ার হোল্ডারকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়৷ তাই ঐশ্বরিয়ার শেয়ারের পরিমাণ কতটা তা স্পষ্টভাবে প্রকাশে না এলেও অঙ্কটা যে ছোটখাটো নয়, তা বোঝা যায়৷ এমনকি, ঐশ্বরিয়ার বাবা কৃষ্ণরাজ রাই, মা বৃন্দা রাই এবং ভাই আদিত্য রাইয়েরও ওই সংস্থাগুলিতে উচ্চ পদ ছিল বলে পানামা পেপারসে প্রকাশিত হয়েছে৷ অমিতাভ বচ্চন এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ না খুললেও ঐশ্বরিয়া এই খবরের বিষয়ে জানিয়েছেন, “যা প্রকাশিত হয়েছে তা সব মিথ্যা৷” আদানি গোষ্ঠীর কর্তা বিনোদ আদানি, ডিএলএফ কর্তা কে পি সিং, ইন্ডিয়াবুলস কর্তা সমীর গেহলোটসহ আরও অনেকের নামই রয়েছে এই তালিকায়৷ তবে এঁদের কেউই দেশের বাইরে থাকা ওই সম্পদ বা তাঁদের পদের অপব্যবহার করেছেন বলে কোন তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি৷

এমনকি, আয়কর বিভাগকে জানিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে বিনিয়োগ কারও আইনের চোখে অপরাধ নয়৷ কিন্তু এঁরা সকলেই সেই নিয়ম অনুসরণ করেছিলেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ ডিএলএফ এবং ইন্ডিয়া বুলস অবশ্য দাবি করেছে, তাদের সমস্ত লেনদেনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা রয়েছে৷ ডিএলএফ-এর সিইও রাজীব তলওয়ার বলেছেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ সমস্ত নিয়ম মেনেই বিনিয়োগ করেছে তাঁদের সংস্থা৷ যদিও এদিন খবরটি প্রকাশিত হতেই একই সঙ্গে এই সংস্থাগুলির শেয়ারদর একধাক্কায় অনেকটা পড়ে যায়৷ ডিএলএফ এবং ইন্ডিয়াবুলসের শেয়ারদর পড়েছে প্রায় চার শতাংশ৷

এদিকে, পানামা লিকের খবরটি প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “যাঁদের বিরু‌দ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে তার সবকয়টিই তদন্ত করে দেখা হবে৷”

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, “সমস্ত বোইনি অ্যাকাউণ্টের বিষয়ে তদন্ত করা হবে৷ যাঁরা মনে করছেন দেশের বাইরে সম্পত্তি লুকিয়ে রেখে ছাড় পাবেন তাঁরা ভুল করছেন৷ সম্পদ গোপন করার জন্য অনেক বড় মাশুল দিতে হবে তাঁদের৷ কেউই ছাড়া পাবেন না৷” সেণ্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্স, আরবিআই-এর ফরেন ট্যাক্সেশন উইং, ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট যৌথভাবে এই বিষয়ে তদন্ত চালাবে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গোপন অর্থ সম্পর্কে আয়কর বিভাগকে জানানোর জন্য ‘এক জানলা বিধি’ চালু করা হয়৷ তখন কিছু ব্যক্তি গোপন আয়ের কথা প্রকাশ করলেও এখনও অনেকেই তাঁদের গোপন আয়ের কথা জানাননি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রণালয়। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে ৪১৪৭ কোটি আয় বহির্ভূত টাকার কথা আয়কর বিভাগ জানতে পারে৷ তবে এই অঙ্ক আরও বাড়বে বলেই মনে করছে কেন্দ্র৷

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে