উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ীবাজার সংলগ্ন চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ তথা সদ্য নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী রেখে কাজ করছেন ঠিকাদার।

এমনকি মাঠটির পূর্ব পাশে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির টিনশেড ঘর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চন্দ্রপুর-জামরিল সড়কের নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদারকে রাখতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে মাঠের চরম ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলছে এ অবস্থা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়েছে।

এ মাঠেই খেলেছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ডিফেন্ডার আবু ইউসুফ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
খেলার মাঠটি ভাড়া নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্রাইট কনস্ট্রাকশন ফার্ম লিমিটেড।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের ধাড়িয়াঘাটা মৌজার ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩ ও ৯৪ দাগে মোট ৩ একর ২৫ শতাংশ জমির বিশাল অংশজুড়ে খেলার মাঠ ছিল।

বৃটিশ আমলের জমিদারদের নামানুসারে ‘বাবুর মাঠ’টি কালিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় মাঠ। সম্প্রতি এ মাঠটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পূত্র শেখ রাসেলের নামে নামকরণকৃত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে।

কিন্তু এ মাঠটির আরএস (চূড়ান্ত) রেকর্ড চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে হওয়ায় বরাবরই মাঠটির খবরদারি করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে কারণে কারোর কাছে না শুনে বা কারও অনুমতির তোয়াক্কা না করেই মাঠটিতে কখনো গরুর হাট বসানোর স্বিদ্ধান্ত,আবার কখনো ভাড়া দেয়াসহ
যথেচ্ছা ব্যবহার করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। কালক্রমে এর একটি অংশ বেদখল হয়ে মাঠটির স্বাভাবিক পরিবেশ ইতিমধ্যে ব্যহত হয়েছে।

মাঠের উত্তর-পশ্চিমাংশের বেশ কিছুটা জায়গাজুড়ে ২০০৯ সালে নভেম্বরে পুরুলিয়া ইউপি ভবন নির্মাণ করা হয়। অথচ এই মাঠে ওই বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীসহ আশপাশের ১৫ গ্রামের ছেলেরা ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট খেলে।

প্রতিবছর এখানে ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রাস্তার অদূরে এ খেলার মাঠে পাথরের খোয়া, বালু,পিচের (বিটুমিন) অসংখ্য ড্রাম ইত্যাদি রেখেছেন। পাশাপাশি আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও রড রাখাসহ একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া ভারী ভারী ট্রাক, স্কেভেটরসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যানবাহন যাতায়াতের কারণে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সারাক্ষণ বড় বড় ট্রাকসহ ভারী যান চলাচল করায় মাঠটির উত্তর পাশের কংক্রিটের ঢালাই কাজ মারাত কভাবে ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বড় বড় খেলার আয়োজনগুলো এ মাঠে হতো। নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে এলাকার শিশু-কিশোরদের
খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, একদিকে,চন্দ্রপুর-জামরিলডাঙ্গা নির্মাণাধীন সড়কের ঠিকাদার খেলার মাঠে পূর্ব পাশে পাথর ও বালুর বিশাল স্তুপসহ সড়কের বিভিন্ন রকম নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রেখেছেন। মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাথরের কুচি। মাঠের ভেতর রয়েছে ভারী ভারী যন্ত্র। মাঠের মধ্যে ওঠা-নামা করছে পাথরবোঝাই ট্রাক ও ভারী ভারী যন্ত্র।

মাঠটির পূর্ব পাশের গোলপোস্টের সামনেই পাথর-বালু মিশ্রণের জন্য প্লান্ট মেশিন বসানো আছে। বিকট শব্দে চলছে সেটি। দক্ষিণ পাশেই মাটি খুঁড়ে পিচ (বিটুমিন) গলানোর চুলা স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত টায়ার ও গার্মেন্টস তুলা পোড়ানোর তীব্র কালো ধোঁয়ায় যেন ওই এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

অপরদিকে,মাঠের পূর্বে প্রান্তে প্রবাহিত লাইনের খালের ওপর নির্মিত একটি ব্রিজের নির্মাণ শ্রমিকদের বসবাসের জন্য টিনের তৈরি একটি আবাসিক ঘর
নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘মাঠের পূর্বে পাশে গোল পোস্টের পেছনের খালি জায়গায় ঠিকাদারের ১২-১৫ জন শ্রমিকদের থাকার জন্য এ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ মাঠে নির্মাণাধীন ব্রিজের শুধুমাত্র রড রাখা হলেও সড়কের ঠিকাদার নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য এই মাঠের একটি বড় অংশ ব্যবহার করছেন।’

মাঠ সংলগ্ন চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘ খেলার মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখাসহ পরিবেশ দূষণকারী টায়ার পুড়িয়ে বিটুমিন
গরম করার সময় দুর্গন্ধে এলাকায় থাকাই দায়। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয়নি।

আশপাশের এলাকার ভেতরে ছেলেমেয়েদের একটি মাত্র খেলাধুলার মাঠ হলো শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে। সেটাও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দেড়-দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। বর্তমানে বিদ্যালয় খোলা রয়েছে কিন্তু খেলার মাঠ বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন,‘চন্দ্রপুর-জামরিল সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল
ইসলাম ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক খাতা-কলমে কত টাকা চুক্তি করেছে তা ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন কিংবা আমাদের জানাননি।’ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ দীর্ঘদিন যাবত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম বিদ্যমান। ইতিমধ্যে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তার আপন খালাত ভাইকে এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করে একটি পকেট কমিটির মাধ্যমে তার অনিয়মের পরিমাণটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের মাঠ কীভাবে এবং কত টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে তা শুধু প্রধান শিক্ষকই বলতে পারবেন।’ স্থানীয় খেলোয়াড় নাঈম মিয়া বলেন,‘পাথর আর বালুর বিশাল সব স্তুপ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে