ডেস্ক রিপোর্টঃ কর ফাঁকি রোধ এবং করদাতার সংখ্যা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওয়েবভিত্তিক নিজস্ব সফটও্যার ও মোবাইল এ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে করজালের বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষকে করজালে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে বলে আশা করছে রাজস্ব প্রশাসন।
এনবিআর সূত্র জানায়,সফটওয়্যারের মাধ্যমে আয়কর বিভাগের ৬৪৯টি করাঞ্চলকে মোবাইল এ্যাপসের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এই এ্যাপস ব্যবহার করে যে কেউ কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানে নিয়োজিত ব্যক্তির কর পরিশোধ সনদ বৈধ কিংবা কার্যকর অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ কি-না তা যাচাই করতে পারবেন। কার্যকর না হলে এই এ্যাপসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট করাঞ্চলে অভিযোগ করারও সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসস’কে বলেন, মোবাইল এ্যাপস ব্যবহার করে একজন ক্রেতা বা সাধারণ নাগরিকের যখন কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর পরিশোধ সনদের বিষয়ে অভিযোগ করার সুযোগ থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কর প্রদানে সতর্ক হয়ে যায়। এই বিবেচনা থেকে এনবিআর ওয়েবভিত্তিক নিজস্ব সফটও্যার ও মোবাইল এ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
এই মোবাইল এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে সত্যিকার অর্থে যেন কর ফাঁকি রোধ হয় এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ে এজন্য আয়কর আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৮৪ (সি) উপধারায় কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানে নিয়োজিত ব্যাক্তির কর সনাক্তকরণ নম্বরের (আইএন) সনদপত্র নিজস্ব কার্যালয়ে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামুলক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি পরিপালন করা হচ্ছে না। তাই এই বিধান পরিবর্তন করে কর পরিশোধ সনদপত্র ঝুলিয়ে রাখার বিধান করার চিন্তা করছে এনবিআর। একইসাথে সেটি যেন কঠোরভাবে পালন করা হয় সেই উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান,যে মোবাইল এ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে,তাতে কেবল কর পরিশোধ সনদ যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে। অন্য কোন বাড়তি তথ্য থাকবে না।
কর্মকর্তারা বলেন,কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিকভিত্তিতে নিয়োজিত চিকিৎসক,প্রকৌশলী, আইনজীবিসহ অন্যান্য পেশায় যারা আছেন, তারা নিয়মিত কর না দিলে কর পরিশোধ সনদ আপনাআপনি বাতিল হয়ে যায়। সুতরাং অকার্যকর সনদ মানেই তিনি কর পরিশোধন করেননি। এ কারণে এর চেয়ে বাড়তি তথ্য এ্যপাস-এ দেয়ার প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য,দেশে বর্তমানে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কিন্তু এর মধ্যে আয়কর বিবরনী (রিটার্ন) দাখিল করেন মাত্র ২০ লাখ। অর্থ্যাৎ অর্ধেক ইটিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন না।
রাজস্ব প্রশাসন আশা করছে-ওয়েবভিত্তিক নিজস্ব সফটও্যার ও মোবাইল এ্যাপস চালু করা গেলে ইটিআইএনধারী ও রিটার্ন দাখিল জমাদানকারীর মধ্যে যে ব্যবধান আছে,সেটা অনায়াসে কমে আসবে এবং অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে করজালে নিয়ে আসা যাবে। এতে কর ফাঁকিও অনেকাংেশ কমে আসবে।
করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে এনবিআরের নানামূখী উদ্যোগে নিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া গতকাল বাসস’কে বলেন,দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ শতাংশ এখন কর দেন। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। তাই আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,‘এ লক্ষে আমরা কাজও শুরু করেছি। কর জরিপ চলছে। এর পাশাপাশি কর অফিস ও জনবল বাড়ানো হবে। সর্বোপরি অনলাইন কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মনে করেন প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ানো যাবে,কর ফাঁকি রোধ করার পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পাবে। সেই লক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে