ডেস্ক রিপোর্টঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় (৫ নভেম্বর) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে অসংগতি পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্রে হিসাববিজ্ঞানের অংশে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন এবং ব্যবসায় শিক্ষার অংশে হিসাববিজ্ঞানের প্রশ্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে বিপাকে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। সমাধান দিতে গিয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি করেন হল পরিদর্শকরা। ইউনিট কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কথা বলেই হল পরিদর্শকরা দেন ভিন্ন ভিন্ন সমাধান। পরীক্ষা শেষে অনুষদীয় সভায় পরীক্ষা বাতিলের পরামর্শ থাকলেও সমাধান খুঁজতে করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়ও বড় ভুল করেছিলেন শিক্ষকরা। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটে একই প্রশ্নে দুই শিফটে পরীক্ষা নেয় সংশ্লিষ্টরা। পরে ভর্তি পরীক্ষার সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সি’ ইউনিটের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শিফটের পরীক্ষা বাতিল করে ফের পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ। পুনর্ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ছিল কম। এ ছাড়া ওই বছরই ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘জি’ ইউনিটে বাণিজ্য শাখার প্রশ্ন দিয়ে নেওয়া হয় অবাণিজ্যের পরীক্ষা। এ ইউনিটেও অবাণিজ্য শাখার ১৫ জন শিক্ষার্থীর ফের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রশাসন ‘সি’ এবং ‘জি’ ইউনিট নিয়ে যথাক্রমে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান ও অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়াকে আহ্বায়ক করে পৃথক তদন্ত কমিটি করে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি বলে জানা গেছে।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে আইন অনুষদভুক্ত ‘এইচ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে ২১টি ভুল ছিল। ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ‘বি সেট’ প্রশ্নপত্রে ইংরেজির ১০টি এবং রসায়নের ৯টি প্রশ্ন ছিলই না। এর পরিবর্তে রসায়নের ২১টি প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটে। পরে ফটোকপি করে প্রশ্ন বিলি করেন শিক্ষকরা। এর কারণ অনুসন্ধানে তাৎক্ষণিক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রশসান। তদন্তের পর ভুলের কারণে ইউনিটসংশ্লিষ্টদের শুধু ভর্ৎসনা করা হয়। একই বছর শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীর যোগসাজশে ‘এফ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এতে ভর্তি হওয়া ১০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে প্রশাসন। পরে আবার পরীক্ষা নিয়ে নতুন ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করে কর্তৃপক্ষ। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে ভর্তির সুযোগ পায় বাতিল হওয়া পরীক্ষায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।

ইবির ভর্তি পরীক্ষায় বারবার এমন ভুলের জন্য মাসুল দিতে হয় ভর্তীচ্ছুদের। প্রশ্নপত্রে অসংগতি থাকায় পরীক্ষার হলে মানসিক চাপে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। অসংগতি সমাধান করতে শিক্ষকরা ১৫-২০ মিনিট সময় নের। তবে পরে বেশির ভাগ কক্ষেই সময় বাড়ান না পরিদর্শকরা। এরপর এক পরীক্ষা শুধু শিক্ষকদের ভুলে কারণে দুইবার দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ক্ষোভে পুনর্ভর্তিতে অংশ নেয় না অনেক শিক্ষার্থী। সর্বোপরি সময় ও মানসিক চাপের বিচারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে বলেও দাবি ভর্তীচ্ছুদের। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষার্থী মাইশা রহমান বলেন, ‘ইবির ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরও এমন ভোগান্তির (ভুল) শিকার হয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে, উত্তরপত্রের ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী উত্তর দিতে। বের হয়ে শুনলাম অনেক রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে, জানি না। পরীক্ষা দিতে এসে বিব্রত হয়েছি।’

অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ শিক্ষক ইউনিটের দায়িত্বে থাকায় এমন ভুল হচ্ছে প্রতিবছর। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী মনে করেন, এটি প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশও হতে পারে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা হলে উপস্থিতি আশানুরূপ হয় না। এতে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বেশি সুযোগ পায়। আবার ভুলকারীদের কোনো বিচার না হওয়ায় এমন ভুল হয়। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মতিউর রহমান বলেন, ‘একজন ভর্তীচ্ছু একটি ভুল উত্তর দিলে মার্ক কাটা যাচ্ছে। অথচ একজন শিক্ষক ভুল প্রশ্ন করলে তাঁর শাস্তি হচ্ছে না। প্রশ্নপত্রে ভুল বা অসংগতি রেখে কিভাবে ভর্তীচ্ছুর মেধা যাচাই হবে।’

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য এবং ইবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রীয় প্রশাসন এবং আমাদের (শিক্ষক) আরো যত্নবান ও সতর্ক হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের ওপর আমাদের দায়িত্ববোধ রয়েছে। আমরা দায়িত্বে অবহেলা করলেই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’

ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছোট পরিসরে কাজ করছে। সবার সম্পৃক্ততা থাকলে এমনটি হয়তো ঘটত না। প্রশাসন দক্ষ বা যোগ্যতার বিচার করে না। কাছের মানুষ দিয়ে কাজ করানোর প্রবণতায় বারবার ভুল হচ্ছে। এ বছর প্রতিটি ইউনিটে উপাচার্য মনোনীত সদস্য রয়েছেন। তাই এই ভুলের দায় তাঁরই নিতে হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘সতর্কতার অভাবেই এমন ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আগামীতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে