internet_connection

বিডি নীয়ালা নিউজ( ২৮জুলাই ২০১৬ইং)- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্কঃ ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সবার নিচে অবস্থান বাংলাদেশের। আর দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের আগে আছে বাংলাদেশ।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪। এমন তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) উন্নয়ন সূচক ২০১৬’ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন ও বিভিন্ন দেশের ক্রমতালিকা (র‌্যাঙ্কিং) তৈরিতে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।

র‌্যাঙ্কিং তৈরিতে ১১টি সূচককে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি দেশে প্রতি ১০০ জনে কতজন মুঠোফোন, সংযুক্ত বা ফিক্সড টেলিফোন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ফিক্সড ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহার করেন সেগুলোর ভিত্তিতে র‌্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি একটি দেশের সার্বিক শিক্ষার হার, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার হারকেও র‌্যাঙ্কিং তৈরিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ১১টি সূচক যোগ করে ২০১৫ সালে ১০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২ দশমিক ২২।

আইটিইউর প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রকৃত অবস্থা ফুটে ওঠেনি। কোন ভিত্তিতে আইটিইউ এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হলো সেটি বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।’
ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মনে হয় না প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি।’

তবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করেন। তিনি বলেন, দেশব্যাপী ডিজিটাল অবকাঠামো সম্প্রসারণে প্রতিযোগিতার অভাব এবং এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা। এর পাশাপাশি বেতার তরঙ্গের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় তরঙ্গের একটি বড় অংশই ব্যবহৃত হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে এ দুরবস্থা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের থেকে ভালো অবস্থানে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির অবস্থান ১১৫। এরপর ভুটান, ১১৯ নম্বরে। ভারত আছে ১৩১ নম্বরে, নেপাল ১৩৬ নম্বরে। এরপর ১৪২ থেকে ১৪৪ নম্বর স্থানে আছে যথাক্রমে মিয়ানমার, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় সব শেষে আছে আফগানিস্তান (১৫৬)। ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৮। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে মাত্র চার ধাপ। একই সময়ে ভারত ১২৫ থেকে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১৩১ ও পাকিস্তান ১৩৮ থেকে পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ১৪৩ নম্বরে এসেছে।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ভাগের দেশগুলোতে ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বা এর কম, দ্বিতীয় ভাগের দেশগুলোতে ৫০ শতাংশ বা এর কম, তৃতীয় ভাগে ৭৫ শতাংশ বা এর কম আর শেষ ভাগে আছে ৭৬ শতাংশ বা এর বেশি। বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ের দেশগুলোর মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ইন্টারনেট-সুবিধার বাইরে থাকা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমপক্ষে ৭৬ শতাংশ। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর গড় ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ এশিয়ার গড় মান থেকে অনেক পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান।

বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩২ লাখ। সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নির্ধারণে বিটিআরসির নিয়ম হলো, ৯০ দিন বা তিন মাসের মধ্যে একজন ব্যক্তি একবার ব্যবহার করলেই তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬: ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট-বঞ্চিত একক জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পাঁচ নম্বর।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ বা ১৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবাবঞ্চিত।

 

 

 

bdnews24

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে