জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা করছে সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগ ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা-২০২২’ এর খসড়া করে নিয়ে এলেও এ সংক্রান্ত কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এমন শর্তে নীতিমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগে একটা নীতিমালা ছিল, কিন্তু সেটা অতটা প্রিসাইজ ছিল না। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু একটা নির্দেশনা দিয়েছিল যেন দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে একটা বিশেষ অর্গানাইজেশন করার জন্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিপি বা সাইক্লোন প্রিপারনেস প্রোগ্রামের অধীনে ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় বড় ভূমিকা রাখতেন। এখন তাদের সংখ্যা ৭৮ হাজার হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতেও স্বেচ্ছাসেবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সংবিধানের ১৬ ও ৫৯ অনুচ্ছেদে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই ও অভীষ্ট উন্নয়ন, রূপকল্প-২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ এ ধরনের বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন স্বেচ্ছাসেবী নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’

‘নীতিমালা অনুযায়ী নিজের এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে তাদের। কমিউনিটি শিক্ষা ও শিখন কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী গ্রুপ, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার গ্রুপ, পরিবেশ গ্রুপ, কমিউনিটি সহায়তা গ্রুপ, সংগঠিত সামাজিক গ্রুপ, সমন্বিত কমিউনিটি কার্যক্রম, কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠান উৎসব, খেলাধুলা, বিনোদন ও অবসরের কার্যক্রম, করপোরেট স্বেচ্ছাসেবা, প্রাসঙ্গিক ও স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছাসেবা, সেবা দেওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অনলাইনে স্বেচ্ছাসেবা- এ স্বেচ্ছাসেবা কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ এ উদ্যোগটা নিলেও স্বেচ্ছাসেবার কার্যক্রমের বিকাশ, তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংযুক্ত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ, যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমবায় সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার পর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হলো। একটা মন্ত্রণালয়কে নেতৃত্বে থাকতে হবে। যদিও এটা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপস্থাপন হয়েছে, তারাই এ উদ্যোগ নিয়েছে। অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী এটার নেতৃত্বে থাকার কথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য নেতৃত্ব দানকারী মন্ত্রণালয় হিসেবে দায়িত্বটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। তারা স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে, কিন্তু অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও সহায়তা নিতে পারবে।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জাতিসংঘ থেকেও আমাদের বলা হয়েছে, আমাদের একটা স্বেচ্ছাসেবী নীতিমালা থাকা দরকার। কারণ স্বেচ্ছাসেবায় বাংলাদেশ অনেকটা পাইওনিয়র বা পথপ্রদর্শক। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যেভাবে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সেখান থেকে ধারণা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ধরনের কাজ করেছে।’

‘এই নীতিমালার ফলে বাইরের স্বেচ্ছাসেবীরা প্রয়োজনে আমাদের দেশে এসে কাজ করতে পারবে। আমাদের দেশের স্বেচ্ছাসেবীরাও দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করতে পারবে।’

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে ৬৮ হাজার সেচ্ছাসেবী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে মিলে সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম করা যাবে।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে