ডেস্ক রিপোর্ট : শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে ত্বকেও আসে শুষ্কভাব। প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার অভাবে কারও ফাটে পা, কারও ফাটে ঠোঁট। এছাড়াও শীতের সময় অন্যতম সমস্যা হাত-পা ঘামা তো রয়েছেই।

শীতকালের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান।

চামড়া ওঠা

সরীসৃপ গোত্রের প্রাণী না হলেও মানুষের চামড়া কিন্তু পরিবর্তন হয়। শীতকালে তা আরও বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে তালু ও পায়ের চামড়া। অবসর সময়ে অনেকেই এই চামড়া টেনে তোলেন। তবে এই কাজে জোরাজুরি করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

অতিরিক্ত চামড়া উঠলে কিংবা চামড়া টেনে ওঠানোর সময় রক্তপাত হলে ওই স্থানে একজিমা, প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে। সেক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধের প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ যেমন- হেক্সাসল, আফটার শেইভ লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চরাইজিং লোশন, ভ্যাসলিন, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি। রক্তপাত বন্ধ না হলে কিংবা অস্বস্তি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক মলম কিংবা ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। সাবান ব্যবহার কমাতে হবে।

পা ও ঠোঁট ফাটা

শীতকালে এই সমস্যার সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত। পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপ বাম এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই এই সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট।

তবে কারও ক্ষেত্রে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। রক্তপাত ও জ্বালাভাব দেখা দেয়। আবার এই ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমনের দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম ব্যবহার করতে হবে।

হাত-পা ঘামা

শীতের একটি বিরক্তিকর সমস্যা। ঘামে ভেজা হাতের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেকেই। পা ঘামা আরও একধাপ বেশি, যাদের সারাদিন জুতা পরতে হয় তাদের পা ঘামার কারণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়।

স্যান্ডেল পরলে বাইরের ধূলাবালি লেগে স্যান্ডের ভেতরে কাদা হয়ে যায়, পিছলে পড়ার আশঙ্কাও থাকে।

সমাধান সহজ। এক গামলা পানিতে কয়েকটি পটাশ দানা ফেলে দিন। পানির রং হালকা বেগুনি হলে ওই পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাত-পা ডুবিয়ে রাখুন। ঘাম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

খোসপাঁচড়া

‘স্কেবিজ’ নামটা অনেকেরেই পরিচিত। এক ধরনের পরজীবির আক্রমণে ত্বকে এই রোগ হয়। ছোঁয়াচে বলে একজন থেকে অন্যজনে বিস্তার ঘটে খুব সহজে।

ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই এই রোগ থেকে বাঁচার এবং আক্রান্ত হলে আরোগ্য লাভ করার মূলমন্ত্র।

প্রতিদিন গোসল করতে হবে, তবে সাবান ব্যবহার কমাতে হবে। এই রোগ নিরাময়ের জন্য মলম ব্যবহার করতে বলা হয়। তবে মলম নয় বরং মলমটি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করাই হল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে, তাই একই বাড়ির একজনের হলে বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ওই বাড়ির সুস্থ-অসুস্থ সকলকে মলমটি ব্যবহার করতে হবে।

দুপুরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে সারা শরীরে মলমটি মাখতে হবে। পরের দিন বিছানার চাদর, বালিশের খোল, পরিহিত কাপড় ইত্যাদি সবকিছু গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে পরে নিজে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। রোগ মুক্তি না হলে সাতদিন পর আবার একই নিয়মে সবাইকে মলম মাখতে হবে।

এছাড়াও চুলকানি, মরা চামড়া, ত্বকের শুষ্কতা, নাকের চামড়া ওঠা, ‘সানবার্ন’ ইত্যাদি শীতের প্রচলিত ত্বকের সমস্যা। এজন্য ত্বক ময়েশ্চারাইজ বা আর্দ্র রাখতে হবে সবসময়।

মরা চামড়া খুটিয়ে কিংবা গোসলের সময় কাপড় দিয়ে ঘসে তোলার চেষ্টা করা উচিত নয়। নিয়মিত গোসল করতে হবে, প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সাবানের ক্ষার ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়, তাই শীতে সাবান ব্যবহার কমাতে হবে।

শীতে রোদ পোহানো অত্যন্ত আরামের বিষয়। তবে মনে রাখতে হবে, আরাম লাগলেও ‘সানবার্ন’ হতে পারে, বিশেষ করে সকাল ১০টার পর থেকে। তাই শীতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

B/D/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে