Untitled-1

বিডি নীয়ালা নিউজ(২জানুয়ারি১৬)- অনলাইন প্রতিবেদন: এখন শীতকাল। আর শীতকাল মানেই উলের হাত-মোজা, পা-মোজা, টুপি সহ তালিকায় থাকত সোয়েটার আর শালও। শীতের আগেই হাতে বোনা উলের শীতপোশাক তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত। উলের শালের ব্যবহার এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। তবে পুরোনো শালকেই ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন রূপে উপস্থাপন করছে।

শীত তাড়াতে গায়ে শাল জড়িয়ে রাখার প্রচলন প্রায় শেষ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং শালটাকে পোশাকের একটি অনুষঙ্গ হিসেবেই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। ছোটবেলায় বাড়িতে শাল বানানো হতো উল থেকে। নিজের হাতে উলের শাল তৈরিও করেছেন। এখন সময়ের অভাবে হয়তো আর বোনা হয় না। কিন্তু ইচ্ছেটা এখনো আছে। কোনো একদিন উল নিয়ে বসে পড়বেন শাল বানাতে, হাসতে হাসতে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার।
শালের ধরনটাই এখন বদলে গেছে। একসময় ৪৫ থেকে ৪৮ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া শাল বানানো হতো। বর্তমানে ৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। শাল পরার কায়দায়ও চলে এসেছে নতুনত্ব। লিপি খন্দকার বলেন, ‘এখন শালকে বিভিন্ন রকমের আকার দেওয়া হচ্ছে। পনচো কিন্তু শালেরই আরেকটি রূপ। পনচোগুলোকেও বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের সঙ্গেও মানিয়ে যাচ্ছে। সব বয়সীদের কাছে এখন সোয়েটারের চেয়ে শালটাই বেশি জনপ্রিয়।’
বিশ্বজুড়েই শাল পরার প্রচলন আছে। দেশভেদে শাল পরার ভিন্নতা দেখা যায়। ইন্ডিগোর ফ্যাশন ও ক্র্যাফট ডিজাইনার শৈবাল সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে গায়ে জড়িয়ে শাল পরার প্রচলন বেশি দেখা যায়। অন্যান্য দেশে শালটাকে স্কার্ফ বলা হয়। জ্যাকেটের ওপর তো আর শাল পরা যায় না। শালটাকেই স্কার্ফের মতো করে বেঁধে নিচ্ছে তারা।’ ফ্যাশনের প্রতি সচেতনতা অনেক বেড়ে গেছে এখন। ফ্যাশন ডিজাইনাররা সেসব দিক চিন্তা করেই শালে নতুন নকশা উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছেন ক্রেতাদের। শালগুলোকেই একটু নতুন রূপ দেওয়ার জন্য কাটে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জ্যাকেটের মতো করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। পরার পর শালকেই তখন জ্যাকেট মনে হবে। শৈবাল সাহা বলেন, ‘একসময় শাল মোটা সুতায় তৈরি হতো। এখন এটার সঙ্গে অ্যাক্রিলিক, সিনথেটিক সুতা, উল মেশানো হচ্ছে। একটু উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। খাদির নিজস্ব উষ্ণতা আছে। এখন খাঁটি খাদি সুতা পাওয়া যায় না বললেই চলে। যার কারণে অ্যাক্রিলিক মেশানো হয়। আমি হাতে বোনা কাপড়ের ওপর কাজ করতে পছন্দ করি। খাদিটাকেই একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাই। উলের শাল তো আছে। শাল কিনে নিজেরাও বাড়তি নকশা যোগ করতে পারেন।’
অন্যান্য জায়গার চেয়ে রাজধানীতে তুলনামূলক কম ঠান্ডা পড়ে। ভারী শাল এ কারণে খুব একটা ব্যবহার করা হয় না। বাজারে পাতলা শালগুলোকে পশমি শাল নামেই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। জানান শীতের সময় এগুলোই বেশি জনপ্রিয় হয়। দাম ৫০০-৬০০ টাকার ভেতরে হওয়ায় চাহিদা বেশি। তসর ও পশমিনার শালগুলো পাতলা হওয়ায় বহন করতেও সুবিধা।
ফ্যাশন ডিজাইনার মায়া রহমান বলেন, ‘তসর ও পশমিনার শালের ওপর জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশা ফুটিয়ে তুলেছি এবার প্রিন্টের মাধ্যমে। পাড়ে বিপরীত রঙের পাইপিং দিয়েছি মোটা করে। শালের ওপর ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ও টাইডাইয়ের মাধ্যমেই নকশাগুলো এনেছি।’ খাদি, তসর, সিল্ক, অ্যান্ডি, ডুপিয়ানের বাইরেও বিভিন্ন উপকরণে তৈরি শাল পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে।
ফ্যাশন হাউস নোয়ারের পরিচালক শাহ্ রাইদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে ভেড়ার উল ও মেরিনো উলের শাল বানানো হচ্ছে। ভেড়ার উলে তৈরি শালগুলো একটু বেশি নরম ও ফিনিশিং ভালো হয়ে থাকে। মেরিনো উলের তৈরি শালগুলো তুলনামূলকভাবে খসখসে হয়ে থাকে। শীত মানেই গাঢ় রং। আমরা একটু উজ্জ্বল রং ব্যবহার করেছি। শালে এবার ফুলের, মিশরীয়, জ্যামিতিক প্রিন্ট বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া শালে পাড়, মুক্তা, পুঁতি, ব্লকপ্রিন্ট, শিবোরি, নকশি কাঁথা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ভিন্নমাত্রা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। শালটাকে জড়িয়ে নেওয়ার পর যতটুকু দেখা যায় তার মধ্যে বাড়তি নকশা দেওয়া হচ্ছে।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে