lieutenant motiur rahman

বিডি নীয়ালা নিউজ(২০ই  আগস্ট ২০১৬ইং)-ডেস্ক রিপোর্টঃ  বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ল্যাফট্যান্ট মতিউর রহমানের ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অসামান্য। অসম সাহসিকতার জন্য তিনি এদেশের মানুষের মনে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন।

১৯৭১ সালে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে করাচি থেকে ঢাকা আসেন। ২৫ মার্চের কালরাতে মতিউর ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুললেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী। পরে তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ ব্যুহতৈরি করেন। এর পরই কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

মতিউর সবচেয়ে দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করেন একাত্তরের ২০ আগস্ট। এইদিন সকালে করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটিতে তারই এক ছাত্র রশীদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করেন। কিন্তু রশীদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দিলে, অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এ সময় রশীদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন এবং বিমান উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় রশীদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন।

তার মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়। সেখান থেকে করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের অসীম সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মূল্যায়নস্বরূপ তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন তাকে শত্রুভূমি পাকিস্তান থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এনে স্বাধীন বাংলার মাটিতে পুনরায় সমাহিত করা হয় ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে।

মতিউর রহমানের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের পৈত্রিক বাড়িতে। অবশ্য তার পৈতৃক নিবাস তৎকালীন ঢাকা জেলা বর্তমান নরসিংদি জেলার রায়পুরা থানার রামনগর। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মতিউর ৬ষ্ঠ। বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ১৯৬১ সালে তিনি বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৬৩ সালে বৈমানিক হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং ডিউটি পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্ত করে পেশোয়ারে গিয়ে জেট পাইলট হন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এরপর মিগ কনভার্সন কোসের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর রিসালপুরে পাঠানো হয় তাকে। রিসালপুরে দু’বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করার পর ১৯৭০-এ করাচি বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে। আর সেখান থেকেই যুদ্ধে আসেন।

 

 

 

 

risingbd

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে