বিডি নীয়ালা নিউজ(২০ই আগস্ট ২০১৬ইং)-বিনোদন ডেস্কঃ ৮০ তলা ভবন, তাও আবার কাঠের- সোজা কথা নয়! কিন্তু কল্পনার পর্যায় ছাড়িয়ে লন্ডনের আকাশ ফুঁড়ে যে কোনো সময় দাঁড়িয়ে যেতে পারে এটি। বিশ্বের প্রথম ‘উডেন স্কাইস্ক্রেপার’ হিসেবে রেকর্ডবুকে নাম লেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রিটেনের প্রস্তাবিত ‘ওক উড টাওয়ার’। মাটি থেকে খাড়া ১ হাজার ফুট লম্বা হবে এটি। কাঠ দিয়ে এ ক্যারিশমা দেখানোর জন্য খাতা-কলমের সব কাজ শেষ। পিএলএ আর্কিটেকচার এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের যৌথ পরিকল্পনায় এখন আলোর মুখ দেখার অপেক্ষায় আছে এ ভবনটি। বাস্তবে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলেই পৃথিবীতে কাঠনির্মিত সবচেয়ে উঁচু ভবন হবে এটি। সিএনএন জানায়- অস্ট্রিয়ার একটি গবেষণায় দেখা যায়, কাঠের ঘর মানসিকভাবে অনেক সুখী রাখে মানুষকে। শিশুদের বিকাশেও ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে কাঠের।
কিন্তু গগনচুম্বী এ কাঠের ভবনে আগুন লাগলে কী হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! এ ক্ষেত্রে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার আশংকাকে একেবারেই পাত্তা দেননি বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, আগুনের তাপে স্টিলের চেয়ে কাঠই বরং কম পোড়ে। কাঠের আগুন দ্রুত ছড়ায় এ ধারণাটিকেও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল বলে অভিহিত করেছেন তারা। কাঠের বড় বড় ফালিগুলোর তাপ সহনশীলতা অনেক বেশি বলেও দাবি করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুসারে, ছোট মাপের কাঠে দ্রুত আগুন ধরে। কিন্তু কাঠের আকার ও আকৃতি যতই বাড়তে থাকে আগুন সহনশীলতাও তত বাড়তে থাকে। বড় ও পুরু কাঠে সহজে আগুন লাগে না। লাগলেও তা দ্রুত ছড়ায় না। তারা আরও জানান, এ ব্যাপারে অগ্নি বিশেষজ্ঞ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের যৌথ পরামর্শ নেয়া হবে। কাঠের ঘনত্ব কত বেশি এবং বড় হলে সাধারণ আগুনে কোনো ক্ষতি হবে না তা নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া বিপজ্জনক মাত্রার তাপে সর্বোচ্চ সময় টিকে থাকার জন্য কাঠের মাপ কেমন হবে তা নির্ধারণ করেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল ম্যাটেরিয়াল ইনোভেশন সেন্টারের ডক্টর মাইকেল রামাজি বলেন, ‘নতুন নির্মাণ কৌশলের মাধ্যমে কাঠ দিয়ে টেকসই এবং সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করার পদ্ধতি বের করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কাঠের সহযোগী হিসেবে বাঁশকে ব্যবহার করা হবে। এশিয়া মহাদেশে হাজার বছর ধরে বাঁশ দিয়েই অনেক টেকসই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।’ গবেষকরা আরও জানান, আমরা সঠিকভাবে বাঁশ প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছি। পোক্ত বাঁশ দিয়ে প্রথমে ভবনের পিলার বানানো হবে। মূলত সব ধরনের পিলারের কাজে বাঁশ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা চলছে।
সিএনএন জানায়, এর আগেও বিশ্বব্যাপী কাঠের বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ভাসমান বহুতল প্যাভিলিয়ন পৃথিবীর অন্যতম সুরম্য ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া সুইডেনের ‘সিডা ভিড সিডা’ নামে একটি ১৯ তলা কাঠের ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এটিই হবে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ কাঠের ভবন। এদিকে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নির্মাণ করা হয়েছে ১০৪ ফুট উচ্চতার ‘ভিক্টোরিয়া হারবার’ নামে ১০ তলা একটি কাষ্ঠ ভবন। ২০১৪ সালে নরওয়ের সুউচ্চ কাঠের ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল কাঠনির্মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন। কিন্তু ২০১৫ সালে ১০৯ ফুট উচ্চতার নতুন কাঠের ভবন বানিয়ে সর্বোচ্চ খেতাবটি দখল করে নেয় লন্ডনের ‘সোরেডিচ হাই-এপার্টমেন্ট’। তবে কানাডার ১৭৪ ফুট উচ্চতার ১৮ তলা ‘টল উড বিল্ডিং’টির নির্মাণকাজ শেষ হবে সহসাই। আপাতত এটিই সর্বোচ্চ কাঠের ভবন হিসেবে অভিহিত হবে- অন্তত সুইডেনের ১৯ তলা ভবনটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
jugantor





