ডেস্ক রিপোর্টঃ বর্তমানে সরকারি, আধা সরকারি/ বেসরকারি ও  ব্যক্তি মালিকানাধীন (প্রাইভেট) কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় ৬ হাজার ৮৮২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান তিনি।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে সরকার দলীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, এসব বকেয়ার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৪২ কোটি ৯৮ লাখ, আধাসরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭৬৩ কোটি ৯০ লাখ এবং প্রাইভেট (ব্যক্তিমালিকানাধীন) প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬ হাজার টাকা।

সংসদে মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন মন্ত্রলালয়ের মধ্যে বকেয়ায় প্রথম স্থানে রয়েছে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পাওনা রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ১৪২ কোটি ৪৮ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ১২৮ কোটি ৩৯ লাখ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৭৮ কোটি ১৬ লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৬২ কোটি ৫০ লাখ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। আর সবচেয়ে কম শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাত্র ২০ হাজার টাকা ও বাণিজ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, এসব বকেয়া বিল আদায়ে ট্রাক্সফোর্স গঠন করে ঝটিকা অভিযান চালান হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। সেই সাথে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

সরকারী দলে মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশে মোট ৪ লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রয়েছে।

আওয়ামী লীগের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওয়াধীন ৮৪ হাজার ৫৬৩টি গ্রামের মধ্যে ৭০ হাজার ১২০টি গ্রাম পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৯ হাজার ৮১৮টি আংশিকভাবে বিদ্যুতায়ন শেষ হয়েছে। অবিদ্যুতায়িত ও আংশিকভাবে বিদ্যুতায়িত গ্রাম গুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৮ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইনের কাজ চলছে। তিনি আরো জানান, নতুন ২ কোটি ১৭ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ২৫ লাখ এবং বিদ্যুতের সামগ্রিক সিস্টেম লসের পরিমাণ শতকরা ১৬ দশমিক ৮৫ থেকে কমে হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ ভাগে। সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কাজ চলছে।

সরকারী দলে সদস্য সাহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গ্যাস লাইন সম্প্রসারণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাবনার ঈশ্বরী থেকে ভেড়ামারা হতে কুষ্ঠিয়া-যশোর হয়ে খুলনা জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এক হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪ টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে। বর্তমানে গ্যাস থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ২ দশমিক ৮০ টাকা, ডিজেল থেকে ১৯ দশমিক ৩০ টাকা, ফার্নেস ওয়েল থেকে ১১ দশমিক ৪৮ টাকা এবং কয়লা থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৭ দশমিক ৩৮। উৎপাদন খরচ বেশী হলেও ভর্তূকি দিয়ে বিদ্যুতের বিক্রি মূল্য ৪ দশমিক ৮২ টাকা বলে জানান তিনি। 

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ভোলায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত এক দশমিক ০০৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদসহ দেশে এবছরের জানুয়ারী পর্যন্ত ১১ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে