ডেস্ক রিপোর্টঃ উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা ক্রমে বাড়ছে। সঙ্গে আছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও কনকনে বাতাস, যা জনজীবনে ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনকে। কোথাও কোথাও শীত এতটাই জেঁকে বসেছে যে অনেকেই কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছে না। বাড়িতে বসেও অবশ্য শীতের পরোক্ষ প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছে না অনেকে। আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকেই দগ্ধ হচ্ছে; এদের বেশির ভাগই নারী। এ ধরনের ঘটনায় ইতিমধ্যে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিধিদের খবরে বিস্তারিত—

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কয়েক দিন ধরে সেখানকার তাপমাত্রা ছয় থেকে সাত ডিগ্র্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় শীত জেঁকে বসেছে। এই অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রাজিয়া বেগম (২৭) এবং একই জেলার আদিতমারীর মোমেনা বেগম (৩২)। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু হয় তাঁদের। একই ধরনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সেখানে ভর্তি আছে আরো ১৫ জন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার হতদরিদ্র পরিবার। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা আগুন পোহাতে গিয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হয়ে গত বছর ১২ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৫ জন চিকিৎসা নিতে এসেছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সেখানে দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শীতের কাপড় না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। কৃষকরা মাঠে নামতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে বোরো রোপণ। এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশার কারণে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছত্রাকের আক্রমণে ভয়ের মধ্যে আছে আলু চাষিরা। কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত জানান, ত্রাণ অধিদপ্তর থেকে আসা ৪১ হাজার কম্বল উপজেলা  ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাড়ে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। শীতজনিত রোগে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। বীজতলাও নষ্ট হচ্ছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গত ২৯ ডিসেম্বর; ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা ওঠানামা করেছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামিম কবীর বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে আসছে। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে