ডেস্ক রিপোর্টঃ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা-গাজীপুরের পরে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা। এর মধ্যে রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহই ৮৭ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। এদিকে সিলেটে দুই কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ফলাফল দেওয়া হয়নি। ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফলে এগিয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। তবে ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়ে বেসরকারি ভাবে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৩৮ ভোট কেন্দ্রে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট পেয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। এবারে সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ৮৭ হাজার ৩৯৬ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হলেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি স্থগিত হওয়ায় মেয়র প্রার্থী কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান। তবে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের চেয়ে ৮৭ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন সাদিক। স্থগিত কেন্দ্রের মোট ভোট ৩২ হাজার ৯৩০টির সব কটি সরোয়ার পেলেও তিনি সাদিককে অতিক্রম করতে পারবেন না বলে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা মাত্র।

সিলেটে আরিফুল এগিয়ে : দুই প্রধান প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান স্থগিত দুটি কেন্দ্রের ভোটের চেয়ে কম হওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের ফল ঘোষণা হয়নি। ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফলে এগিয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। গতকাল অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়; সেখানে মোট ভোট সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭টি। শীর্ষ দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান এর চেয়ে কম ৪ হাজার ৬২৬টি হওয়ায় ফল ঘোষণা করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান। স্থগিত দুই কেন্দ্রের ফলে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।

গতকাল রাত সাড়ে ১১টার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন নগরীর উপশহরে স্থাপিত ফল ঘোষণা কেন্দ্র থেকে এই সিদ্ধান্ত জানান তার আধা ঘণ্টা আগে গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনর্গণনার দাবি জানানো হয় কামরানের পক্ষ থেকে। এ সময় বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক ফল ঘোষণার ওই কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ফল যাই হোক না কেন, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার পর সেখানে উপস্থিত আরিফুল সাংবাদিকদের বলেন, তারা সারাদিন চেষ্টা করেছে লোকজন যেন ভোটকেন্দ্রে না আসে।

কিন্তু মানুষকে দূরে রাখা যায়নি। তারা এসেছেন এবং ভোট দিয়েছেন। এ বিজয় জনগণের বিজয়। ফল প্রত্যাখ্যানের অবস্থান থেকে সরে আসছেন কি না— এই প্রশ্নে বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘এটা ফলাফল প্রত্যাখ্যান না। যেখানে কেন্দ্র দখল হয়েছে, যেখানে জাল ভোট হয়েছে, যেখানে ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে, আমি সেসব বিষয়কে ঘৃণা জানিয়েছি। এ সিটির নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান জানান, সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন খান ২ হাজার ১৯৫ ভোট, সিপিবি-বাসদের প্রার্থী আবু জাফর ৯০০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের ২৯২ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম ৫৮২ ভোট পেয়েছেন।

রাজশাহী : এ সিটিতে মেয়র প্রার্থী ৫ জন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. হাবিবুর রহমান পেয়েছেন ৩২০ (কাঁঠাল) ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের মো. মুরাদ মোর্শেদ ১০৫২ ভোট (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ৩০৩২ ভোট।

সর্বশেষ জয়-পরাজয়ের চিত্র : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্টে চার সিটি (রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনায়) ভোট হয় একদিনে। এতে আওয়ামী লীগ জয় পায় চারটিতে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৫ জুনে ভোট হয় একসঙ্গে চার সিটিতে; তাতে জয় পায় বিএনপি। এর আগে খুলনায় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ইসি জানিয়েছে, অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে বরিশালের সিটির একটি ও সিলেটের দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। রাজশাহীতে কোনো কেন্দ্র স্থগিত হয়নি।

বিএনপির অভিযোগ, এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ‘ভোট ডাকাতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ’ ঘটেছে। বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই মাঝবেলায় ভোট বর্জন করেন এবং ভোট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী বলেছেন, ফল যাই হোক, তা তিনি প্রত্যাখ্যান করছেন। আর রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিজের ভোটও দেননি। তার ভাষায়, গণতন্ত্র যখন ‘বিপন্ন’ তখন ভোট দিয়ে কী হবে? এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, তিন নগরে ভোট হয়েছে ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন— শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ও কাজী শাহেদ, রাজশাহী এবং রাহাত খান, বরিশাল।

B/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে