photo-kishoreganj-nilphamari-09-09-16

বিডি নীয়ালা নিউজ(৯ই সেপ্টেম্বর ২০১৬) আ,ফ,ম মহিউদ্দিন শেখ কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
হাত পেতে ও মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে যাদের ভিক্ষা করা ছিল পেশা। এরকম ৯৮৯ জন পুনর্বাসিত স্বাবলম্বীর পথে। পুনর্বাসিতরা হয়ে উঠেছে এক এক জন উন্নয়ন কর্মী হিসেবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ৯৫১ জনকে সদস্য করে লোনের মাধ্যমে করা হয়েছে কর্মমুখী। তাদের বর্তমান সঞ্চয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ২৪২ জন পুনর্বাসিতকে ঘর নিমার্ণ করে দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হয়। তালিকাভূক্ত ৯৮৯ জনকে পুনর্বাসিত এর আওতায় এনে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়। এছাড়া তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টুনীর আওতায়ও আনা হয়। দেয়া হয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে খাওয়া মানুষ গুলো কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি এক এক জন উন্নয়ন কর্মীতে রুপান্তর হয়েছে। পুনর্বাসিতদের মধ্যে ৯৫১ জনকে একটি বাড়ি একটি খামারের সদস্য করে দেয়া হয় লোন। লোনের টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ব্যবসা করে আজ তারা স্বাবলম্বীর পথে। তাদের একাউন্টে বর্তমানে নিজস্ব সঞ্চয় ৪৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮শ’ টাকা , কল্যাণ অনুদান ৪৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮শ’ , আবর্তক তহবিল ৪৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৬ শ’ ২৩ টাকাসহ মোট তহবিল রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬১ হাজার ২ শ’ ২৩ টাকা তহবিল রয়েছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুনর্বাসিতদের সাফল্য কথা শুনে সরেজমিনে সাফল্য চিত্র দেখার জন্য আসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি পুনর্বাসিতদের পুনর্বাসনের কাহিনী শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি পুনর্বাসিতদের যার জমি তাদের জমিতে ঘর নিমার্ণের প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করার আশ্বাস দেন। এর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম পর্যায় ১০ জন পুনর্বাসিতদের ঘর নিমার্ণের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পুনর্বাসিত ১০ জনের ঘর নিমার্ণ কাজ প্রেরিত প্লান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক ঘর নিমার্ণ সম্পন্ন হলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের একটি দল তা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩ দফায় আরো ২৩২ জনের ঘর নিমার্ণের জন্য ঘর প্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করেন। ঘর নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসক, নীলফামারী উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব, উদ্যোক্তা, একটি বাড়ি একটি খামারের মাঠ সহকারী, সুধীলসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন কিভাবে পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ দ্রুত ও সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়। একটি কর্মপরিকল্পনাও করা হয় বলে জানা গেছে। বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নিমার্ণ কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ত্বথাবধানে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নিমার্ণ কাজটি বাস্তবায়ন করেছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পেয়ে পুনর্বাসিতরা খুবেই খুশী ও মাথা গোজার ঠাই পেয়েছে বলে পুনর্বাসিতরা অভিমত প্রকাশ করেন। বাহাগিলী ইউনিয়নের আলেমা জানান- ঝড়-বৃষ্টির দিনোত কি যে কষ্ট করি আছনু। ঘর পাওয়া আর কষ্ট করির নাগবে না। চাঁদখানা ইউনিয়নের আলিজোন বেওয়া জানান- সরকার থাকি ঘর পাওয়ায় মোক আর কষ্ট করির নাগবে না। রনচন্ডী ইউনিয়নের মহিলা জানান- আল্লাহ এবার হামার প্যাকে ঘুরে দেখছে। থাকার একটা ঘর হইছে। গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের বাচ্চানী বেওয়া জানান- চটের বস্তা দিয়ে চালা বানেয়া কি কষ্ট করে আছনু। ঝড়-বৃষ্টি আর শীতোত ভিজি আছনু। আর মোক ঝড়-বৃষ্টি ও শীত নিয়ে চিন্তা করিবার নাগিবে না। সরকার মোক একটা ঘর দিয়া কি যে উপকার করছে। আলেমা,আলিজোন বেওয়া, মহিলা, বাচ্চানী বেওয়ার মত ২৪২ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক ঘর পাওয়া তাদের দুঃখ-দুর্দশার দিন শেষ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ এর “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ” প্রকল্প হতে এসকল পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী এস এম কেরামত আলী নান্নু জানান- পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের ঘর নির্মাণ কাজ প্রেরিত প্লান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক যাতে হয় এজন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়োজিত করা ছিল।
ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের সময়কার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান জানান- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ এর “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ” প্রকল্প হতে বরাদ্দকৃত পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের ঘর নির্মান কাজ সম্পন্নপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসান জানান- উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে। পুনর্বাসিতরা ঘর পাওয়ায় তাদের সামাজিকভাবে মর্যাদা বেড়েছে। সফলভাবে ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় আগামীতে বাকী পুনর্বাসিতদের ঘর বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি।

সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমানে নড়াইল জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার সকলের বাসস্থানের অধিকার স্লোগানকে ধারণ করে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত আত্তনির্ভর কর্মীদের গৃহের ব্যবস্থা করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব মহোদয়সহ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো জানান- ভিক্ষুক পুনর্বাসনে কিশোরগঞ্জ একটি রোল মডেল। কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভিক্ষুক পুনর্বাসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আসায় ভিক্ষুকদের ঘর নির্মাণ কাজ পাইলটিং হিসেবে কিশোরগঞ্জকে বেছে নেয়া হয়। তিনি আরো জানান- কিশোরগঞ্জ উপজেলার অভিজ্ঞতা ও আদোলে নড়াইল জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কাজ চলছে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোঃ জাকীর হোসেন কিশোরগঞ্জকে ভিক্ষুকমুক্ত করার বিষয়টি ব্যতিক্রমী ও বড় ধরণের সাহসী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন- স্বল্প সময়ের মধ্যে এ চ্যালেজিং প্রকল্পটি সকলের সহযোগিতায় সফলতা পেয়েছে। স্থানীয়ভাবে এ মহতি কাজটি যেন সকলে মিলে করি যাতে সাড়া দেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়। ভিক্ষুক পুনর্বাসনের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কার্যালয়ের সু-দৃষ্টি থাকায় অবশিষ্ট পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলে আশা করছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে