_91549220_57943759-f7cb-45ad-9df8-aaa209ee2a73 

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওদের জন্য সংসদে যে নতুন আইন পাশ হয়েছে সেটির কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এনজিওদের মধ্যে।

এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন ‘বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন ২০১৬’ নামের এ আইনটিতে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেটি তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

তবে এই আইন প্রণয়নের সাথে জড়িতরা বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয় বরং কেউ যাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবমাননা করতে না পারে সেজন্য এ আইনে নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।

নতুন আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, কোন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমাননা করে কোন মন্তব্য করে তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ আপত্তি আছে অনেক এনজিও’র ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, এ ধারাটিতে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়টা সংবাদমাধ্যমে যেভাবে এসেছে বিষয়টা যদি আইনে ঠিক এভাবে হয়ে থাকে তাহলে এটাকে হতাশাব্যঞ্জক বলতে হবে। যে শব্দগুলো বলা হয়েছে – ‘অশোভন’ বা ‘বিদ্বেষমূলক’- এ শব্দগুলো তো ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা বা অপ-ব্যাখ্যার সুযোগ থাকবে।”

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের নানা প্রতিবেদনে সরকারের সমালোচনা করেছে।

গত বছর টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের সমালোচনা করে সেটিকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এবিষয়টিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। তারা বিষয়টিকে সংসদের ‘অবমাননা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।

আইনে নতুন ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সে মন্তব্যটিকে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

তিনি বলছেন, “টিআইবি পার্লামেন্ট সম্পর্কে খুবই ডেরোগেটরি একটি মন্তব্য করলেন। এটা কোন্ দেশে আছে যে একটা কন্সটিটিউশনাল বডিকে গাল দেবে আর তাকে নিয়ে নাচবে। একটি দেশের কতগুলো সার্বভৌম জায়গা আছে, সে জায়গায় যাওয়ার কোন অধিকার আপনাকে কেউ দেয় নাই।”

তিনি বলেন এ ধারাটির মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে একটি প্রোটেকশন নিয়ে রাখা হয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন উঠছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কোন অনিয়ম করে তাহলে সেগুলো সম্পর্কে কী কোন সমালোচনা করা যাবেনা?

মি. সেনগুপ্ত বলেন, “একশোবার পারবে। অনিয়ম হলে পারবে না কেন? কিন্তু অবমাননা করা যাবেনা।”

এনজিওগুলোর অনেকেই মনে করে তাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এ ধারা যুক্ত করা হয়েছে যাতে তারা সরকারের সমালোচনা করতে না পারে।

আইনে এ ধরনের একটি ধারা থাকলে তাতে এনজিওগুলো চাপ অনুভব করবে এবং তাতে সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে এনজিওগুলো সাবধানী হবে বলে তারা মনে করছেন।

এক্ষেত্রে যেসব এনজিও মানবাধিকার, দুর্নীতি এবং সুশাসন নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হবে।

মি. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা আশা করিনা যে এ ধরনের একটি আইন আছে বলেই সরকার এমন কোন পদক্ষেপ নেবে যা আমাদের কার্যক্রমে সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।”

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার পথ বন্ধ করার জন্য এ আইন করা হয়েছে।

তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলছেন এনজিওদের নিয়ন্ত্রণ বা কণ্ঠরোধ করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাছাড়া কোনটি ‘অবমাননা’ এবং কোনটি ‘সমালোচনা’ সে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োগ করা হবে বলে মি. সেনগুপ্ত উল্লেখ করেন।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে